চিকিৎসায় গাফিলতির কথা স্বীকার করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল

Looks like you've blocked notifications!
সেন্ট্রাল হাসপাতালের ফাইল ছবি

নবজাতক সন্তানসহ মারা যাওয়া মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসায় অবহেলা ও গাফিলতির কথা স্বীকার করেছে রাজধানীর বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আজ সোমবার (১৯ জুন) হাসপাতালে সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক ডা. এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আঁখির চিকিৎসায় হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল। গাফিলতি ছিল প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহার, তারপর ওটির (অস্ত্রোপচার কক্ষ) চিকিৎসকদের।’ কারণ হিসেবে সেসময় জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের না ডাকার কথা বলেন নজরুল ইসলাম।

অন্তঃসত্ত্বা আঁখিকে গত ৯ জুন কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে এনে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ভর্তি হয়েছিলেন চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে। ফেসবুকে ডা. সংযুক্তার কার্যক্রম দেখে তার সহায়তায় স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্ম দিতে চেয়েছিলেন এই প্রসূতি।

আঁখিকে চিকিৎসক সংযুক্তার অধীনে ভর্তি করা হলেও তিনি তখন দেশের বাইরে ছিলেন। বিষয়টি রোগী বা স্বজনদের কাছে গোপন রাখে কর্তৃপক্ষ। অন্য চিকিৎসকরা তার স্বাভাবিক প্রসব করানোতে ব্যর্থ হয়ে গত ১১ জুন অস্ত্রোপচার করেন। এ সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়। সংকটাপন্ন হয়ে পড়েন আঁখিও।

এরপর তাকে সেখান থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাকে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। রোববার দুপুর ২টার দিকে আঁখিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

ঘটনাটির বিষয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক ডা. এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এর তদন্ত প্রতিবেদন আসার কথা। ইতোমধ্যেই পাঁচ দিন চলে গিয়েছে, বাকি রয়েছে আর দুদিন। আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’

হাসপাতালের পক্ষ থেকে কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম তো এখনও শেষ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন এলেই আমরা অ্যাকশনে যাব।’

অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা প্রতিদিন প্রায় দেড়শ’ থেকে দুইশ’ রোগী দেখেন। এভাবে রোগী দেখায় মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব কি না প্রশ্নে হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক বলেন, ‘আসলে কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে গেলে একজন চিকিৎসকের দৈনিক এত রোগী দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু, সংযুক্তা সাহা দেখতেন। কী বলব আর এটি নিয়ে।’

হাসপাতাল প্রশাসন কি তাহলে এ বিষয়গুলো এতোদিন জানতো না- এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে, চিকিৎসা তো মূলত চিকিৎসকরাই দেন। কোনো একটা ইনসিডেন্ট ঘটলেই সেটা আমাদের কাছে আসে। এর বাইরের বিষয়গুলো তো আমাদের জানানো হয় না। এজন্যই আমরা এই বিষয়গুলো জানতে পারিনি।’

এদিকে চিকিৎসকদের অবহেলা এবং ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে না থাকলেও তার নামে অস্ত্রোপচার করার বিষয়ে ১৬ জুন ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তারা দুজনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।

ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণার অভিযাগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিদর্শন টিম গঠন করে। ওই টিম হাসপাতালটি পরিদর্শন করে কিছু নির্দেশনা দেয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, ডা. সংযুক্তা সাহা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিত অনুমোদন ছাড়া সেন্ট্রাল হসপিটালে কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না। আইসিইউ এবং জরুরি সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

অভিযোগ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং পরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশনায় জানানো হয়।

এরপর গত ১৬ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাশাপাশি হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক সংযুক্তা সাহা ওই হাসপাতালে আপাতত কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না বলেও জানায় অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকা সত্ত্বেও তার নামে অস্ত্রোপচারের ঘটনায় নবজাতক ও পরে মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’