গণঅধিকার পরিষদে রেষারেষি, এবার নুর-রাশেদকে অব্যাহতি
গণঅধিকার পরিষদে শুরু হওয়া রেষারেষি এখন প্রকাশ্যে। গতকাল সোমবার (১৯ জুন) দলটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে রাশেদ খাঁনকে ঘোষণা করা হয়। দিন পার না হতেই সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ও রাশেদ খাঁনকে অব্যাহতির ঘোষণা এলো। সয়ং দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া তাদের এই ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজেও প্রকাশ করেছেন। পেজটিতে দেওয়া ঘোষণা রেজা কিবরিয়ার বলে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিৎ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য শাহাবুদ্দিন শুভ। সেখানে নুর ও রাশেদকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফেসবুকে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গণঅধিকার পরিষদের গঠনতন্ত্র, ২১ দফা কর্মসূচি, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং মূলনীতি বিরোধী কাজ করা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান, মানি লন্ডারিং আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠা, ইসরায়েলসহ বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, অনৈতিক আর্থিক লেনদেন, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সভা আয়োজন ও অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনোনয়ন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মো. নুরুল হক নুরকে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হলো। একইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির এক নম্বর যুগ্ম আহবায়ক মো. রাশেদ খানকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হলো।’
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘উভয়কে দলের দপ্তর বরাবর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হলো। একইসঙ্গে আমি ড. রেজা কিবরিয়া, আহ্বায়ক, গণঅধিকার পরিষদ সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে পরবর্তী নির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সদস্য সচিব হিসেবে কোটা সংষ্কার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও অধিকার পরিষদের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা হাসান আল মামুনকে (মো. আল মামুন) ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে মনোনীত করছি। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আন্দোলন বেগবান করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।’
এর আগে গতকাল সোমবার দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও দপ্তর সমন্বয়ক শাকিল উজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মাদ আতাউল্লাহর সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। সভায় সাংগঠনিক আলোচনা ছাড়াও গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় উদ্ভূত পরিস্থিতি ও দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে—উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুশৃঙ্খলভাবে দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খাঁনকে সর্বসম্মতিক্রমে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়।’
গণঅধিকার পরিষদ যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফও এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পাল্টাপাল্টি বিবৃতি প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নতুন ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাকে এবং নুরকে বহিষ্কারের বিষয়টি আমি গণমাধ্যমে দেখেছি। এ ব্যাপারে আমাকে এবং নুরকে কিছু জানানো হয়নি। তা ছাড়া পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া তো এখন দেশে নেই। তিনি অসুস্থতার চিকিৎসায় দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে থাকলে আমাকে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করার দরকার ছিল না।’
রাশেদ খাঁন আরও বলেন, ‘আমাদের বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে, বুঝতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে আমরা রাতেই আমাদের কেন্দ্র ও জেলার নেতাদের নিয়ে মিটিং করব। তারপর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মূলত সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার আমাদের দলকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু, এটা কেউ করতে পারবে না।’
এ বিষয়ে রেজা কিবরিয়া ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত নতুন সদস্য সচিব হাসান আল মামুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ডা. রেজা কিবরিয়া গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি পরিষদের জন্য যেকেনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ফলে, তিনি তার ক্ষমতাবলে নূর ও রাশেদকে বহিষ্কার করেছে।’
হাসান আল মামুন আরও বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় থেকে আমি আহ্বায়ক ছিলাম। তখন আমার নেতৃত্বে আন্দোলন সফল হয়েছিল। এখন ডা. রেজা কিবরিয়া ও নূরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন—দল ও দেশের স্বার্থে। ঠিক এরকম একটি সময়ে দলের হাল ধরার প্রয়োজন। আজ থেকে আমি ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করব।’
গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহাবুদ্দিন শুভ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানকে বহিষ্কার করেছেন।’