মঠবাড়িয়া থানার সাবেক ওসির আগাম জামিন স্থগিত
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার সাবেক ওসি সৈয়দ আব্দুল্লাহ ২৬ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের মামলায় আগাম জামিন স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী আজ সোমবার (২৬ জুন) তার হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন।
গত ২০ জুন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন।
দুদকের করা মামলায় বলা হয়, পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ আব্দুল্লাহর স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি সন্দেহজন লেনদেন পাওয়া গেছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা, তার স্ত্রী ও শাশুড়ির নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে ১৮ কোটি ১৬ হাজার ৫৬৩ টাকার।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আব্দুল্লাহর স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে সাড়ে ২৬ কোটি টাকা। মাদক-চোরাচালান কারবারিদের সঙ্গে সখ্য, মিথ্যা মামলা দেওয়ার মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন আব্দুল্লাহ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুল্লাহ বর্তমানে ফেনীর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ক্রাইম শাখায় পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ ১৯৯১ সালে উপ-পরিদর্শক পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি ২০০৭ সালে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। এই পদে থেকে তিনি সিআইডি সদর দপ্তর, নরসিংদী, ডিএমপি, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, যশোর ও বরিশাল হাইওয়ে জেলায় কর্মরত থেকেছেন।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০২০ সালের একটি অভিযোগ অনুসন্ধানের পর সৈয়দ আব্দুল্লাহ, তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার, শাশুড়ি কারিমা খাতুনের বিরুদ্ধে দুদক আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা করে। এছাড়া মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনেও মামলার সুপারিশ করেছে দুদক।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহর স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেন পাওয়া গেছে। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে ১৮ কোটি ১৬ হাজার ৫৬৩ টাকার।
সৈয়দ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে ২০২২ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। তার ও স্বজনের নামে ১৮ কোটি ১৬ হাজার ৫৬৩ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত চলতি বছরের ২৮ মে সৈয়দ আব্দুল্লাহর ১৮ কোটি ১৬ হাজার ৫৬৩ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করে ফ্রিজ করার নির্দেশ দেয়। অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সৈয়দ আব্দুল্লাহ, তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার, শাশুড়ি কারিমা খাতুনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তে আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পদ ফ্রিজ ও মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ আব্দুল্লাহ সম্পদ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
আব্দুল্লাহর অবৈধ সম্পদের বিবরণ
সৈয়দ আব্দুল্লাহ তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খোলা আমানত হিসাবগুলোতে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৪ টাকা আমানত রেখেছেন। স্ত্রীর নামে দুটি এনআইডি কার্ড বানিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩১ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া এই পুলিশ কর্মকর্তার নিজ নামে দুটি প্লট, স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে দুটি আবাসিক ফ্ল্যাট, একটি বাণিজ্যিক স্পেস রয়েছে। ফারহানা আক্তারের ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ পরিশোধ করে শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে একটি আবাসিক ফ্ল্যাট বাবদ মোট ১৫ কোটি ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩২ টাকার বেশি মূল্যের স্থাবর সম্পদ কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা জানান, সৈয়দ আব্দুল্লাহ পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার পদমর্যাদার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অসাধু উপায়ে এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন।
সঞ্চয়পত্র কিনতে ওসির স্ত্রীর দুই এনআইডি
সঞ্চয় অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি এনআইডি কার্ডের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। আব্দুল্লাহ তার স্ত্রীর দুটি ভিন্ন জন্ম তারিখ ব্যবহার করে দুটি এনআইডি কার্ড করেছেন। এসব কার্ডের বিপরীতে স্ত্রীর নামে এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন আব্দুল্লাহ।
দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মোস্তাফিজ জানান, সৈয়দ আব্দুল্লাহ প্রতারণার উদ্দেশে তার স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে দুটি এনআইডি কার্ড করেছেন। আরও একটি নতুন এনআইডির জন্য আবেদন করার তথ্য পাওয়া গেছে।