ঈদের ছুটিতে পর্যটকের চাপ নেই বান্দরবানে

Looks like you've blocked notifications!
বান্দরবানের পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ছবি : এনটিভি

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সন্ত্রাসী তৎপরতার আতঙ্কে ঈদের টানা ছুটিতেও বান্দরবানে পর্যটকদের বাড়তি চাপ ছিল না। তবে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়ায় সাজানো পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে চট্টগ্রামসহ আশেপাশের জেলাগুলো থেকে আসা দর্শণার্থীদের। শুক্র ও শনিবার জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত ও বৌদ্ধ মন্দিরে ভিড় জমিয়েছিলেন ভ্রমণপিপাসুরা।

তবে ভরা মৌসুমেও আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজগুলোতে আশানুরূপ রুম বুকিং না হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। পর্যটক না থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন রেস্টুরেন্ট ও ট্যুরিস্ট পরিবহণ মালিক-শ্রমিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান,  পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ জেলার পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চোখ জুড়ানো সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানকার পাহাড়ের দর্শনীয় স্থান নীলাচল, মেঘলা, বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, শৈলপ্রপাত ঝরনা, রূপালী ঝরনা, মুরুং ঝরনা, বৌদ্ধ মন্দির, স্বর্ণ মন্দির, রামজাদী  স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে পর্যটকদের। পর্যটকরা কখনো লেকের পানিতে প্যাডেল বোটে, কখনো ক্যাবল কারে এবং কখনো নীলাচলের রোমাঞ্চকর দোলনায় প্যারাসেইলিংয়ে আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বাদ নিচ্ছেন।

তবে যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে নিরাপত্তা বিবেচনায় রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকায় দুর্গম অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণে যেতে পারছেন না পর্যটকরা। এই তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তৎপরতার আতঙ্কে ঈদের টানা ছুটিতেও পর্যটকদের বাড়তি চাপ ছিল না এবার। তবে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়ায় সাজানো পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে চট্টগ্রামসহ আশেপাশের জেলাগুলোর স্থানীয় দর্শনার্থীদের।

বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটক চট্টগ্রামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আজব খান ও অধ্যাপক ড. মনোজ বড়ুয়া বলেন, ‘এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঈর্ষনীয়। চোখ জুড়ানো সব সৌন্দর্য মুগ্ধ হবার মতো। ঈদের ছুটিতে যে রকম ভিড় থাকার কথা ছিল তেমনটি নেই বান্দরবানে। একদিকে ভাল লাগছে, কেননা প্রকৃতির নির্জনতা উপভোগ করা যাচ্ছে, অন্যদিকে খারাপও লাগছে পর্যটকদের উপস্থিতি কম দেখে। নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে পর্যটক কম আসছে, তবে এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক। কোনো ঝুঁকি ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারছেন পর্যটকরা।’
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক শামীমা, নীর্জনা, রেশমি বলেন, ‘মেঘলা আকাশ এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। মনে হচ্ছে বান্দরবানের প্রকৃতি আমাদের সাপোর্ট করছে ঘুরে বেড়াতে। গরমের তীব্রতা নেই, চারদিকে সবুজের সমারোহ, অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করছে মনে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাল এখানকার। বর্ষায় পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে বান্দরবান ভ্রমণের বিকল্প নেই।’
এ ব্যাপারে বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, কয়েকদিনের টানা ছুটিতেও আশানুরূপ রুম বুকিং হয়নি আবাসিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে। রুম বুকিংয়ে ছাড় ঘোষণার পরও পর্যটক না আসায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তৎপরতার আতঙ্কে পর্যটকদের আসা কমে গেছে জেলায়। এতে  আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতির মুখোমুখি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তা, আরামদায়ক ও আনন্দময় ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ  এবং হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় বান্দরবানে নতুন নতুন দর্শনীয় পর্যটন স্পট খুঁজে বের করা হচ্ছে। পুরোনো স্পটগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সংযোজন করা হচ্ছে নতুন নতুন বিনোদন ব্যবস্থা। পাহাড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিরাপত্তা বিবেচনায় রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি-এই তিনটি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে।’ তবে এসব এলাকা ছাড়া অন্যসব স্পটে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াতে পারছেন বলে জানান তিনি।