বান্দরবানে ভূমি জালিয়াতচক্রের দৌরাত্ম্য, কেটে নেওয়া হচ্ছে গাছ

Looks like you've blocked notifications!
বান্দরবানের কেরানীকাট সড়কের হলুদিয়া এলাকায় বনবিভাগের শতশত গাছ কেটে নিয়ে গেছে ভূমি জালিয়াতির চক্র। গাছের গোড়াগুলো এখনও দৃশ্যমান। ছবি : এনটিভি

বান্দরবানে বেড়েছে ভূমি জালিয়াতচক্রের দৌরাত্ম্য।  কেটে নেওয়া হচ্ছে বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ। তারপর সেই জায়গা করা হচ্ছে বিক্রি। রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার চোখেও দেওয়া হচ্ছে ধুলো, করে নেওয়া হয়েছে জমির ভুয়া রেজিস্ট্রেশন। এমন সব অভিযোগের পাশাপাশি দাবি করা হচ্ছে, এসব কাজে সংশ্লিষ্ট অফিসের লোকজনের সঙ্গেও বিনিময় হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূয়ালকের কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠের অভিযোগ, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে জমিগুলো চট্টগ্রাম বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল। গর্জন, কড়াইসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বড়বড় মাদার ট্রি ছিল। সবগুলো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তাদের দাবি, বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই নাকি চলে এসব কাজ। 

সূয়ালকের বাসিন্দার জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি কাজী নাছিরুল আলমের অভিযোগ, ‘সূয়ালক বাজার থেকে হলুদিয়া বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুপাশের বনাঞ্চলের জায়গাটি চট্টগ্রাম বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, বনবিভাগের লোকজন জায়গাটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং গাছের চারা রোপন ও পরিচর্যা করত। কিন্তু ভূমি জালিয়াতি চক্র জেলা প্রশাসনের সাবেক এক কর্মচারীর নামের ভূয়া কাগজপত্র চৌহদ্দি মিলিয়ে বসিয়ে রাতের আঁধারে সবগুলো গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। গাছের গোড়ার চিহ্নগুলো এখনও দৃশ্যমান। শুনেছি, বিভিন্ন জনের নামে বনবিভাগের সরকারি জমিগুলো বিক্রিও করে দিচ্ছেন সাইনবোর্ড লাগিয়ে।’ 

আরও অভিযোগ বলছে, ভূমি জালিয়াতির চক্রের সঙ্গে বনবিভাগের অনেকে জড়িত আছেন। জড়িত আছেন জেলা প্রশাসনের সাবেক এক নাজির। যদিও বন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, অভিযোগ পেলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। প্রমাণ পেলে বাতিল করা হবে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন। 

বনবিভাগের সরকারি জমির মালিক দাবিদার অভিযুক্ত জেলা প্রশাসনের সাবেক নাজির মো. আইয়ুব বলেন, ‘আমার নামীয় পাঁচ একর জায়গার কাগজ কিনে নেন ক্যান্টিন বাবুল দাস গং। তারাই মূলত জায়গা বিক্রি করছেন।’

জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা জেলা প্রশাসনের ক্যান্টিনের মালিক বাবুল দাস ও জেলা প্রশাসনের নাইটগার্ড মো. ইউনুচ বলেন, ‘জায়গাটি জমির রেকর্ড অনুযায়ী মালিক আইয়ুব সাহেবের কাছ থেকে কিনেছি। উনার নামে জমির বৈধ সব কাগজপত্র রয়েছে। বনবিভাগের জমি এই জায়গাটির পার্শ্ববর্তী।’

অভিযোগ অস্বীকার করে বান্দরবান বোমাং সার্কেল চিফ কার্যালয়ের হেডক্লার্ক অংজাই বলেন, ‘কোনো ধরনের ভূমি জালিয়াতচক্র এবং জাল রাজার সনদ প্রদানের সঙ্গে আমি জড়িত নই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ভুলক্রমে দেওয়া রাজার সনদ তাৎক্ষণিক বাতিল করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের এনডিসি ও রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা আব্দুল আল মামুন বলেন, ‘রতন দে শাওন নামের একজনের নামে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশনের অভিযোগ পেয়েছি। ভূমি জালিয়াতির প্রমাণ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাতিল করা হবে ভূমি রেজিস্ট্রেশনও। আটকে দেওয়া হবে উপজেলা পর্যায়ে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের সব কার্যক্রমও। জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মচারী জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

চট্টগ্রাম দক্ষিণের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোরশেদ বলেন, ‘হলুদিয়া আশপাশের এলাকায় ১৯৯৫ সালে গড়ে তোলা ৫০ একরের বেশি ন্যাসারাল ফরেস্ট এবং ১৫/২০ একর সামাজিক বনায়ন রয়েছে।’

বনবিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগীয় কর্মকর্তা আব্দুল আল মামুন বলেন, ‘বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি জবর দখলের কোনো সুযোগ নেই। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমি জালিয়াতির চক্রের সঙ্গে বনবিভাগের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’