দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

Looks like you've blocked notifications!
ঝিনাইদহ জেলা শহরের নতুন হাটখোলার ব্যবসায়ীরা দুজনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দোকান বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন। ছবি : এনটিভি

ঝিনাইদহ ড্রাগ সুপারের করা মামলায় দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন জেলা শহরের নতুন হাটখোলার ব্যবসায়ীরা। আজ বুধবার (২৬ জুলাই) সকাল থেকে সবজি, মাছ, মাংস চালসহ সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রেখে এ কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

চা পান বিড়ির দোকানও বন্ধ। এতে বিপাকে নিম্ন আয়ের সাধারণ  মানুষ।

গ্রেপ্তার করা দুই ব্যবসায়ীর মুক্তিসহ মামলা প্রত্যাহার না করা হলে আগামীকাল বৃস্পতিবারও সকাল থেকে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে গোটা জেলার আনাচে কানাচে—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন শতাধিক ব্যবসায়ী।

ঘটনার বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুহাম্মদ সোহেল রানা জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল হক ও  ড্রাগ সুপার (ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক ) সিরাজুম মনিরা ওই বাজারে অবৈধভাবে আয়র্বেদিক ওষুধ ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে গনি শাহ স্টোরের মালিককে ১০ হাজার এবং পাশের নাম বিহীন অপর দোকানের মালিক রুহুলুল্লা খোমেনীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের ব্যবসায়ীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।

ওসি আরও জানান, রাতেই ড্রাগ সুপার সিরাজুম মনিরা বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৯০ জনের নামে থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় মো. আরিফ মিয়া ও অন্তর কুণ্ডু নামে দুজনকে গতকাল রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়। আজ তাদের আদালতে পাঠানো হয় তাদের। বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বাজার কমিটির সভাপতি ( নতুন হাটখোলা) আব্দুর গফুর জানান, আজ সকাল থেকে দোকানপাট বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছেন তারা। তিনি অভিযোগ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানিসহ অর্থিক দণ্ড করা হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না করা হলে আগামীকাল থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।

জেলা দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মতিয়ার রহমান অভিযোগ করে বলেন, গেল কয়েক দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত টানা অভিযান পরিচালনা করছেন। গতকালের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন দফায় দফায় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো পাত্তা দেওয়া হয়নি। বরং মামলা করে দুজন নিরিহ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মো. মতিয়ার রহমান আরও বলেন, মামলায় জেলা শহরের কলাবাগান এলাকার সুশীল সরকার নামের এক ব্যবসায়ীর অন্ধ ছেলে (বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী) সজল সরকারকে আসামি করা হয়েছে। যা চরম অমানবিক। দাবি আদায় না হলে গোটা জেলার সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে আজ রাতে জেলা দোকান মালিক সমিতির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন মতিয়ার রহমান।

অনুন্ধানে বেরিয়ে আসে সোমবার (২৪ জুলাই) সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও  সদর থানার ওসি ওই বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই দিন তরকারি বিক্রেতা এক শিশুসহ অন্তত চারকজনকে জরিমানা করা হয়। সেসময় দোকানি শিশুর বাবা মোশারফ হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।এ ঘটনার পর থেকে ক্ষিপ্ত ছিলেন ব্যবসায়ীরা। অবৈধ ওষুধের দোকানে ড্রাগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক অভিযান পরিচালনার বিষয়টি অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সামনে আসেনি। টানা কয়েক দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা দেওয়া ক্ষিপ্ত ব্যবসায়ীরা লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে বসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল হক ও  ড্রাগ সুপার সিরাজুম মুনিরাকে অকথ্য ভাষায় গাল-মন্দ করেন এবং অন্তত দেড় ঘন্টা তাঁদের অবরোধ করে রাখেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা এসে তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

ঝিনাইদহ পৌরসভার পরিচালনায় এই অঞ্চলের মাছ ও কাঁচামালের আড়ত রয়েছে বাজারটিতে। এ ছাড়া চাল মাংসসহ অনুমান তিনশতাধিক দোকান রয়েছে বাজারটিতে।

এ বিষয়ে ড্রাগ সুপার সিরাজুম মুনিরার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। খুদে বার্তাও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কিন্তু কোনো উত্তর মেলেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।