টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার ৩৪ শিক্ষার্থীকে নিয়ে যা বললেন তাদের অভিভাবকেরা

Looks like you've blocked notifications!
টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আজ মঙ্গলবার বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে  সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকেরা। ছবি : এনটিভি

সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার আশঙ্কায়’ সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৪ শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার হওয়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগকে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও হাস্যকর বলে আখ্যায়িত করেছেন তাদের অভিভাবকরা। পাশfপাশি মামলায় যেসব আলামত দেখানো হয়েছে সেগুলো পুলিশ মামলা সাজানোর জন্য ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেছে বলেও অভিযোগ তাদের।

আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিকেলে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

অভিভাবকদের দাবি, জব্দকৃত মালামাল হিসেবে যেগুলো দেখানো হয়েছে তা অত্যন্ত হাস্যকর ও বানোয়াট। শিক্ষার্থীরা টার্ম ব্রেকের বন্ধের সুযোগে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরতে হাওরে গিয়েছিল। আর টাঙ্গুয়ার হাওরে যেয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে এমন অভিযোগও হাস্যকর।

গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েটের শিক্ষার্থীরা হলেন– আফিফ আনোয়ার, বখতিয়ার নাফিস, মো. সাইখ, ইসমাইল ইবনে আজাদ, সাব্বির আহম্মেদ, তাজিমুর রাফি, মো. সাদ আদনান, মো. শামীম আল রাজি, মো. আবদুলাহ আল মুকিত, মো. জায়িম সরকার, হাইছাম বিন মাহবুব, মাহমুদুর হাসান, খালিদ আম্মার, মো. ফাহাদুল ইসলাম, তানভির আরাফাত, এ টি এম আবরার মুহতাদী, মো. ফয়সাল হাবিব, আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দিকী, আলী আম্মার মৌয়াজ, মো. রাশেদ রায়হান, সাকিব শাহরিয়ার, ফায়েজ উস সোয়াইব, আবদুর রাফি ও মাঈন উদ্দিন।

অন্যরা হলেন– আবদুল বারি, মো. বাকি বিল্লাহ, মাহাদি হাসান, টি এম তানভির হোসেন, আশ্রাফ আলী, মো. মাহমুদ হাসান, মো. এহসানুল হক, রাইয়ান আহম্মেদ, তানিমুল ইসলাম ও মো. আবদুল্লাহ মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েট শিক্ষার্থীদের সকল অভিভাবকের পক্ষ থেকে আলী আম্মার মৌয়াজের বড় ভাই আলী আহসান জুনায়েদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়া আমাদের সন্তান, আপনজনসহ বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে মামলা করা হয়েছে। আমাদের জানা মতে, গত ২৯ জুলাই (শনিবার) তারা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সঙ্গে হাওরে ঘুরতে যান। ভ্রমণের একপর্যায়ে গত ৩০ জুলাই (রোববার) বিকেলে তাদেরকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। সেদিন থেকেই তাদেরকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না।’

আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা মনে করেছি, ট্যুরে আছে, তাই ব্যস্ত আছে হয়তো। কিন্তু, পরবর্তীতে রাতে ভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, ভ্রমণকারী সবাইকে তাহিরপুর থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এরপর থেকে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর জানার জন্য আমরা ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেছি। কিন্তু, তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। কেন তাদেরকে আটক করা হয়েছে আমরা জানতেও পারছিলাম না।’

বুয়েট শিক্ষার্থীর এই বড় ভাই বলেন, ‘পরশু রাতে আমাদের কারো কারো কাছে সন্তান বা স্বজনেরা ফোন করে এনআইডির ছবি চেয়েছে। কিন্তু, তখনও সেই অভিভাবকেরা জানতো না যে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। তাদের দিক থেকেও আর কিছু বলতে দেওয়া হয়নি। গতকাল বিকেলে আমরা জানতে পারি, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে। স্থানীয় ওসি ও এসপিকে ফোন দেওয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে ভিসি স্যারকেও ফোন দিয়েছি। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারো সঙ্গেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি।’

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগকে হাস্যকর আখ্যা দিয়ে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘জব্দকৃত মালামাল হিসেবে যেগুলো তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে, তা বানোয়াট। হাওরে যেয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে, এমন অভিযোগও হাস্যকর। তাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তারা নিশ্চিত করেছে যে, তাদের কাছে এবং সঙ্গে থাকা মোবাইলে প্রত্যাশিত কিছু না পেয়ে মামলা সাজানোর জন্য তাদের সামনেই জব্দকৃত মালামাল হিসেবে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে।’

চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীর এই ভাই বলেন, ‘আমরা বুয়েট প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় তারা। এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র। আমরা তাদের ভবিষ্যত জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।’