বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত না দিলে কানাডার সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে : আইনমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লারের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের লেখা ‘পনেরো আগস্টের নেপথ্য কুশীলব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথি ও আলোচকবৃন্দ। ছবি : শিলালিপি

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনিকে ফেরত না দিলে বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘১৫ আগস্টের নেপথ্যের কুশীলব’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। বইটি লিখেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিলালিপি।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর দুজন খুনির অবস্থান আমরা জানি। তাদের একজন এ এম রাশেদ চৌধুরী, সে আছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যজন এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, সে আছে কানাডায়। নূরকে আনার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কানাডা সরকার তাকে ফেরত দিতে অপরাগতা জানাচ্ছে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কানাডা সরকার বলছে, তাদের আইন আছে, যদি কোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) দেওয়া হয় বা এমন কোনো মামলা আছে, যেটার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তখন তারা সেই ব্যক্তিকে ফেরত দিতে চান না। তারপরও আমরা অনবরত এটা নিয়ে তাগিদ দিচ্ছি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি তারা তাকে ফেরত না দেন, তাহলে তাদের (কানাডা) সঙ্গে আমাদের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এটাও আমরা তাদের জানিয়ে দেবো।’

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের যখন আমরা দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কথাবার্তা বলেছি, কেউ কিন্তু এ প্রশ্নটা অন্তত তুলতে পারেননি যে, বিচার কার্যক্রম সঠিকভাবে হয়নি। কিংবা বিচারকে প্রভাবিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকার্যের মাধ্যমে আসলে বাংলার মাটিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। ফলে ১০০ বছর পরেও কেউ এ মামলার বিচার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না।’

গ্রন্থটির রচনাকে ‘অত্যন্ত সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং কাজ’ উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, বুলবুল একজন সাংবাদিক হিসেবে বিবেকের তাড়নায় এবং পেশাগত দায়িত্ববোধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি মমত্ব থেকে বইটি লিখেছেন বলে আমার বিশ্বাস- এজন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।

আনিসুল হক আরও বলেন, বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে এই একটি মাত্র বই যার মাধ্যমে সেই নীলনকশা ও ষড়যন্ত্র, নৃশংসতা, জিয়াউর রহমানের ভূমিকা- জিয়াউর রহমান কর্তৃক খুনিদের পুরস্কার, পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রবর্তনসহ সব রকমের অপরাজনীতির আবির্ভাব এবং সেই  হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ পরিক্রমা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

অনুষ্ঠানে সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরীও বক্তব্য দেন। 

এসময় রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। যারা চেয়েছিল পাকিস্তানি ভাবধারায় এই দেশ পরিচালিত হবে, তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই এই ষড়যন্ত্র শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ওপর তারা সুপরিকল্পিতভাবে আঘাত করেছে।

ইতিহাসবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বুলবুল তার বইতে নগ্ন সত্যকে তুলে ধরেছেন। শ্রমনিষ্ঠ, তথ্যনিষ্ঠ এই বইকে আমি আকরগ্রন্থ হিসেবে মনে করছি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, কিন্তু তা অসম্পূর্ণ। ষড়যন্ত্রেরও বিচার হতে হবে। আমি এজন্য অবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করার ওপর গুরুত্বারোপ করি।

লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ইতিহাসের অনেক সত্যই আড়াল হয়ে গেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর ঘটনাসহ তদন্ত হওয়া দরকার। সত্যানুসন্ধান জরুরি। এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্য উন্মোচনের কাজটি বুলবুল শুরু করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় আমরা সত্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব।

লেখক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ইতিহাসের সত্য উদঘাটন না হলে আমরা কুহেলিকায় হারাবো। আমার এই প্রয়াসে সত্য জানতে উৎসাহ সৃষ্টি করবে বলেই আমার প্রত্যাশা।

ডিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, এই বইয়ে সেই সময় দায়িত্বশীল যারা ছিল তাদের ভূমিকা স্পষ্ট হবে। সেই সময়ের ঘটনাগুলো নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে যে প্রশ্নগুলো আছে তার উত্তর পাওয়া যাবে। 

ডিইউজের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, এখনো এমন গোষ্ঠী রয়েছে যারা বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করতে চায়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কুশীলবদের আশ্রয়েই এরা বেড়ে ওঠে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিলালিপির প্রধান নির্বাহী ও প্রকাশক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের কারণে সোনার বাংলার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেছে। তেমনি তার হত্যাকাণ্ডের সংঘটনকারীদের বিচার হলেও অনেক প্রশ্নের মীমাংসা এখনো বাকি রয়ে গেছে। সেই প্রশ্নের মীমাংসা না হলে বা সেই সম্পর্কে বৃহত্তর পরিসরে সচেতনতা তৈরি না হলে, আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তির অবসান হবে না। সত্য অবমুক্ত হবে না। আমরা ঘৃণার ঊর্ধ্বে উঠতে পারব না। আমাদের সমতার, ঐক্যের স্বপ্ন, সমৃদ্ধির স্বপ্ন ততটাই বিগ্রহসঙ্কুল থেকে যাবে। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ববোধ থেকে আমরা এই গবেষণামূলক গ্রন্থটি প্রকাশ করেছি।