মুন্সীগঞ্জে ট্রলারডুবির ঘটনায় মামলা, নিখোঁজ তিন

Looks like you've blocked notifications!
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি ভাসমান একটি ক্রেনের সাহায্যে তোলা হয়েছে। ছবি : এনটিভি

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পিকনিকের ট্রলার ডুবে নারী ও শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আজ রোববার (৬ আগস্ট) থানায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন।

জেলার সিরাজদীখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর ও লতব্দী গ্রামের কয়েকটি পরিবারের ৪৬ জন সদস্য গতকাল ট্রলারে করে পদ্মা সেতু দেখার জন্য যায়। রাতে উত্তাল পদ্মা পেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে লৌহজং উপজেলার রসকাঠি গ্রামের তালতলা-ডহরী খালে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ৩৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। খিদিরপুর গ্রামের এখনও তিন জন নিখোঁজ থাকার তথ্য জানান তাদের মামা আরিফ খান। তিনি আজ দুপুরে ঘটনাস্থলেই ছুটে আসেন। এ সময় তিনি মাহিন, নাফা ও তুরান নামে তাঁর তিন ভাগ্নে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান। 

খিদিরপুর গ্রামের দুই বোন পপি আক্তার (৩০) ও এপি আক্তার (২৮) এবং এপি আক্তারের দুই ছেলে সাকিবুল (১০) ও সাজিবুল (৪) নিহত হয়েছে। তারা ওই গ্রামের আব্দুল হাকিমের মেয়ে ও নাতি। একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। আব্দুল হাকিম এখন অনেকটা বাকরুদ্ধ। স্ত্রী এপি ও দুই ছেলে সাকিবুল ও সাজিবুলকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ রাজমিস্ত্রি মো. জাহাঙ্গীরও। স্ত্রী, দুই সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোনকে নিয়ে তিনিও গিয়েছিলেন পিকনিকে।  ট্রলারডুবির পর তিনি সাঁতরিয়ে তীরে উঠতে পারলেও নিহত হয় অন্য সবাই। এই শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন তিনি। তাঁর বড় ছেলে রাকিবুল ইসলাম স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। নিহত সাকিবুল খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক তরকিুল ইসলাম বলেন, সাকিবুল খুবই মেধাবী ছাত্র ও শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল। আচার-আচরণও খুব ভালো ছিল। এ বছর বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। ওর এই অকাল মৃত্যুতে ছাত্র-শিক্ষক সবাই শোকাহত। আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে খিদিরপুর জামে মসজিদে জানাজা শেষে খিদিরপুর কবরস্থানে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়।

সিরাজদীখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের অপর নিহতরা হচ্ছেন লতব্দী গ্রামের মো. শাজাহানের স্ত্রী মোকছেদা বেগম (৪০), খিদিরপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেনের মেয়ে রোজা মনি (৪ মাস) ও ফিরোজ সরকারের ছেলে ফারিয়ান (৮)।

রোজা মনির অকাল মৃত্যুতে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন চাচা ডিএমপির পুলিশ পরিদর্শক মো. আরশাদ আকাশ। তিনি বলেন, ‘ভাই বলার ভাষা নেই, এই দুর্ঘটনায় আমার চার মাস বয়সী ভাতিজি মারা গেছে। দুর্ঘটনায় শিকার সবাই আমার পরিবারের লোক। এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারব কি না জানি না। তবে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব অবৈধ যান চলাচল যেন খুব শিগগিরই বন্ধের ব্যবস্থা নেয়। 

তদন্ত কমিটি গঠন, মামলা

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি ভাসমান একটি ক্রেনের মাধ্যমে তোলা হয়েছে। তবে ট্রলারে নিখোঁজ কারও মরদেহ পাননি উদ্ধারকারীরা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএে) নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, বৃষ্টি ও স্রোতের কারণে ট্রলারটি উদ্ধার করতে বেগ পেতে হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, বিআইডব্লিউটিএর সদস্যরা ট্রলারটির উদ্ধার কাজ শুরু করে। ট্রলারটি থেকে কয়েকটি মুঠোফোন পাওয়া গেছে। তবে কারও মরদেহ পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। তিনি জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

লৌহজং থানার ওসি খন্দকার ইমাম হোসেন জানান, আজ দুপুরে ট্রলারডুবির ঘটনায় লৌহজং থানায় মামলা করা হয়েছে। আটক বাল্কহেডের মালিক, চালক ও সহকারীকে আসামি করে নিহত এপি আক্তার ও পপি আক্তারের ভাই মো. রুবেল বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

জেলার সিরাজদীখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো শরীফুল ইসলাম তানভীর বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। আমরা নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছি এবং বাদ জোহর সিরাজদীখান মডেল মসজিদে নিহতদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছি।’