বঙ্গবন্ধুর জানাজার সঙ্গে সাঈদীর তুলনা, রুয়েট কর্মকর্তা বরখাস্ত

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মো. মিলনুর রশিদ। ছবি : এনটিভি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মো. মিলনুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।

এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ‘ফাউন্ড্রিশপ চেম্বার’ থেকে সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মিলনুর রশিদকে বের করে দিয়ে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। এ সময় অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় তারা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার ঘটনা তদন্তে গতকালই বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. নীরেন্দ্রনাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক ড. আমির হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী মুফতি মাহমুদ রনি। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম।

রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জানাজায় মানুষের উপস্থিতির সঙ্গে সম্প্রতি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি কোলাজ ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন রুয়েটের কর্মকর্তা মিলনুর রশিদ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার মৃত্যুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তাঁর জীবন-কর্মসহ বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে গত ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হেয় করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জানাজার ওই ছবিটি শেয়ার করেন তিনি। এতে রুয়েটসহ রাজশাহীজুড়ে সমালোচনার ঝড় ও তোলপাড় শুরু হয়।

শুধু এই কর্মকর্তাই নন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যাওয়ার পর ‘আল্লাহ আল্লামা সাঈদীকে জান্নাতের মেহমান করে নিন’ এই শিরোনামে একটি বিক্ষোভের ভিডিও শেয়ার করেন রুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সাবেক শিবির নেতা আহসান হাবীব।

এর আগে গতকাল সোমবার নিজের অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রুয়েট কর্মকর্তা মিলনুর রশিদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার কক্ষে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও জোরপূর্বক আমাকে কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আমি এখন কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই।’

রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসফাক ইয়াসির ইপু বলেন, ‘অভিযুক্ত রুয়েট কর্মকর্তার এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে গতকাল বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার কক্ষে যান। এ সময় মিলনুর রশিদ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের উত্তেজিত নেতাকর্মীরা তাঁকে কক্ষ থেকে বের দিয়ে সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন।’

রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জাতির পিতার বিষয়ে কোনো আপস নয়। যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য কিংবা কার্যকলাপ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্য কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমন ঔদ্ধত্য দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি শেয়ার করে থাকলে তদন্ত কমিটিকে তাদের বিষয়েও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।’

রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্পর্শকাতর বিষয় শেয়ার করায় উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে এবং তদন্ত কমিটির তদন্তের স্বার্থে যন্ত্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মো. মিলনুর রশিদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

এদিকে, রুয়েটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আত্মনিয়োগের মাধ্যমে দেশের কল্যাণে নিত্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আহ্বান জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত রুয়েটের অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের (সিএএসআর) ৪৮তম সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই আহহ্বান জানান।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা ছাড়াও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন সিএএসআরের সদস্য সচিব এবং গবেষণা সম্প্রসারণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন।