ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশ

বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলনের কারণে ভূমি ও বসতবাড়িতে ফাটল

Looks like you've blocked notifications!
দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ার ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি : এনটিভি

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের পাতিগ্রাম মোড়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা উত্তোলনের কারণে পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের বসতবাড়ি কম্পনে ফাটল ধরায় ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের পাতিগ্রাম মোড়ে ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির সভাপতি মো. মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়া গ্রামের প্রায় তিন হাজার নারী পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন। বিক্ষোভ শেষে দুপুর ১২টার দিকে পাতিগ্রাম মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান বলেন, আমরা ৬ দফা মেনে নেওয়ার জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কোন কথা কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে- কয়লা তোলার কারণে পাঁচঘরিয়া ও পাতিগ্রামের ফাটল ধরা বাড়িঘরগুলোসহ চলাচলের জন্য প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা দ্রুত পুনঃনির্মাণ করতে হবে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফান্ড দিতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সাথে সমঝোতা চুক্তি মোতাবেক বেকারদের চাকরি ও ভূমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। খনি কর্তৃপক্ষকে সমঝোতা চুক্তি ভঙ্গ করে বহিরাগতদেরকে চাকরি দেওয়া বন্ধ করতে হবে, পূর্বের অধিগ্রহণকৃত মসজিদ কবরস্থানগুলোর জায়গা অধিগ্রহণ করে দিতে হবে। পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়া গ্রামে বসবাসরত চার হাজার পরিবারের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

মতিয়ার রহমান আরও বলেন, আমাদের ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে খনি কর্তৃপক্ষ ও পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংসদ সদস্যকে অবগত করলেও আজ পর্যন্ত কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে আর কতদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই দুটি গ্রামে বসবাস করব? এই এলাকার ভূগর্ভ থেকে কয়লা তোলার কারণে প্রতিনিয়ত দেবে যাচ্ছে। আমরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছি।

মতিয়ার রহমান বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাভবান হলেও এলাকার গ্রাম দুটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা অতি দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাদেরকে বাঁচান।

সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বলেন, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা কবরস্থান রাস্তাঘাট সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এখান থেকে অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাব, সে সুযোগও নেই। কারণ রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে অ্যাম্বুলেন্সও এই গ্রাম দুটিতে আসতে চায় না। তাহলে আপনারা বোঝেন আমরা কীভাবে জীবনযাপন করছি?

পাতিগ্রামের আইয়ুব আলী, পাঁচঘরিয়া গ্রামের মোজাহার আলী, আব্দুল কাদের, মোছা. হেলেনা খাতুনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, নলকূপে পানি উঠছে না, এ এলাকায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগুলোতে যাওয়ার রাস্তা থাকলেও বর্ষাকালে চলাচল করা সম্ভব হয় না। সমস্ত রাস্তা খনির কারণে দেবে গেছে। মসজিদ, নামাজ পড়ার ঈদগাহ ও ফুটবল খেলার মাঠসহ সব ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এর ক্ষতিপূরণ চাই।

পাতিগ্রামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়ার প্রায় তিন হাজার নারী-পুরুষ, স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন।

এই বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম এর সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।