মিথ্যা মামলা দেওয়া নয় পুলিশের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা : ডিএমপি

Looks like you've blocked notifications!

রাজধানীর ফকিরাপুলে ২৫ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় ডিবির নয় সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। আদালতের আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ৭ম আদালতের বিচারক তেহসিন ইফতেখারের সই করা চিঠি আইজিপি বরাবর পৌঁছায়। চিঠিতে ওই নয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে তিন মাসের মধ্যে তা আদালতকে জানাতে বলা হয়। 

আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র উপকমিশনার ফারুক হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ডিবির নয় সদস্যের বিরুদ্ধে আইজিপি মহোদয় বরাবর আদালত থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন আমরা কমিটি করবো। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে অভিযুক্ত নয় পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’ 

ডিবির ওই নয় কর্মকর্তা হলেন—পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী, উপপরিদর্শক দেওয়ান উজ্জ্বল হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমান, সোহেল মাহমুদ, আবুল বাশার, মমিনুল হক ও নাজমুল হক প্রধান এবং কনস্টেবল নয়ন কুমার ও গোলাম সরোয়ার।

রায়ে আদালত বলেন, ‘অভিযুক্ত মো. হাসান মজুমদার ও মো. সোহেল রানাকে ১৯৭৮ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-ক ধারার  অভিযোগের দায় হতে বেকসুর খালাস প্রদান করা হলো। অভিযুক্তদের  জামিনদারগণ জামিননামায় দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। জব্দকৃত আলামত বিধি মোতাবেক ধ্বংসের জন্য ওসি মালখানাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। এজাহারকারী পুলিশ পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী, উপপরিদর্শক দেওয়ান উজ্জ্বল হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমান, সোহেল মাহমুদ, আবুল বাশার, মমিনুল হক ও নাজমুল হক প্রধান এবং কনস্টেবল নয়ন কুমার ও গোলাম সরোয়ারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। অত্র রায়ের কপি প্রাপ্তির তারিখ হতে আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অত্র আদালতকে অবহিতকরণের জন্য ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বরাবর প্রেরণ করা হোক।’  

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের এডিশনাল পিপি মাহবুবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, রাজধানীর ফকিরাপুলে বন্ধু হোটেলের ব্যবস্থাপক ও বাবুর্চি ২৫ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় ডিবি পুলিশের একটি দল তাঁদের ফাঁসিয়ে দিয়েছিল জাল টাকার সাজানো মামলায়। আদালতের রায়ে মামলার আসামিরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় ডিবির নয় সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত। 

মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রাজধানীর পল্টনে হোটেল বন্ধুতে অভিযান চালিয়ে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা হাসান ও সোহেলকে আটক করে। ঘটনাটি হোটেলের সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন ডিবির একজন উপপরিদর্শক। পুলিশের এফআইআরে এ ঘটনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন বিবরণ দেওয়া হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ডিবি পুলিশ। আদালত ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১২ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত গত ২৪ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন। চলতি মাসে রায়ের পর পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার চিঠিটি পুলিশ সদর দপ্তরে পৌঁছায়। এরপর বিষয়টি আলোচনায় আসে। 

আসামিরা জানায়, ঘটনা ফকিরাপুলের মাছ বাজারের পাশের গলিতে নয়, বরং পল্টনের হোটেল বন্ধু আবাসিকের অভ্যর্থনাকক্ষে। ওই দিন সাদাপোশাকে কয়েকজন হোটেলের অভ্যর্থনাকক্ষে আসেন। তাঁরা বলেন, এ হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। এরপর তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় হাসান ও সোহেলকে হাতকড়া পরিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোটেলের সিসি ক্যামেরায় এ ঘটনা ধরে পড়ে।