জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে জেলা আ.লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

Looks like you've blocked notifications!
মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের এক পক্ষের মতবিনিময় (বামে) এবং দলীয় কার্যালয়ে অপর পক্ষের সংবাদ সম্মেলন। ছবি : এনটিভি

মেহেরপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার দাবিতে একাট্টা জেলা আওয়ামী লীগের এক পক্ষের নেতারা। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিশেষ মতবিনিময় সভায় তাঁরা এ দাবি করেন। এর পর পরই জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ফরহাদ হোসেনের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুস সামদ বাবলু বিশ্বাস।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিপক্ষের নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তিকে দুর্বলকারী, দল ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী চক্রের পৃষ্ঠপোষক, তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভীতি প্রদর্শন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের পরাজয়ের কুশীলব তিনি। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি করেন তাঁরা।

গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিশেষ মতবিনিময় সভায় জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী বলেন, ‘মেহেরপুরে আওয়ামী লীগকে এক ব্যক্তি তাঁর ঘরবন্দি করে রেখেছেন। সময় এসেছে আওয়ামী লীগকে আবার রাজপথে সক্রিয় করার। ফরহাদ হোসেনের হাতে নেতৃত্ব চলে যাওয়ায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ছিটকে পড়েছেন। এর সুযোগ নিয়েছে বিএনপি–জামায়াত। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাঁকে আবার দলীয় মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁর পক্ষে কাজ করবেন না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিয়া উদ্দিন বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘নৌকার মাঝি পছন্দ না হলে আমি নৌকায় ভোট দেব না। আর যদি পছন্দ হয় তাহলে সর্বস্ব দিয়ে নৌকার বিজয় ঘরে তুলব।’

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, ‘সারা জীবন আওয়ামী লীগের জন্য জেল-জুলুম, বোমা হামলার শিকার হয়েছি। এর পরও আমি নাকি আওয়ামী লীগের কেউ না। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজের পছন্দমতো লোকদের নিয়ে দল চালান। সেখানে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতারা ঠাঁই পান না। যখন নির্বাচন আসে তখন তিনি দল গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পরে কাউকে মনে রাখেন না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, এমন নেতাকে যেন মনোনয়ন না দেওয়া হয়। তাঁকে বাদ দিয়ে যে কাউকে মনোনয়ন দিলে তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এক হয়ে কাজ করবেন।’

জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক এম এ এস ইমন বলেন, ‘যারা মেহেরপুরে আওয়ামী লীগকে দুর্দিনে ধরে রেখেছে তারা আপনার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছে। সসম্মানে আপনার সরে যাওয়া উচিত। মুজিবনগরকে শেখ হাসিনা উন্নয়নের জন্য ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আপনি নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সারা দেশে যে উন্নয়ন তারই রুটিন উন্নয়ন হয়েছে মেহেরপুরে। পৌর কলেজের ফান্ড থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন সরকারি হয়নি। নিজের বাপের নামে কলেজের নামকরণ করেছেন।’

এম এ এস ইমন আরও বলেন, ‘আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী আমাদের মেহেরপুরকে দেখে যান। আপনার প্রাণের সংগঠনের কী অবস্থা করে রেখেছে দেখে যান।’

আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, ‘দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়েছিল তারাই আজ এই মঞ্চে দাঁড়িয়েছে। মেহেরপুর পৌরসভা, সদর উপজেলা, মুজিবনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। নেতাকর্মীরা এসব জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বললে তার মান চলে যায়। বিএডিসির লেবারকে কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে। মেহেরপুর পৌরসভার দুর্দশার শেষ নেই। মেহেরপুর পৌরসভার উন্নয়নে এখন পর্যন্ত বাধা দিয়ে যাচ্ছেন।’

জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাভলি ইয়সমিন বলেন, ‘আপনারা স্বামী-স্ত্রী ২০১৪ সালের আগে কোথায় ছিলেন। আমরা ভোট চেয়ে আপনাকে নির্বাচিত করেছি। আপনারা মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের দুর দুর করে তাড়িয়ে দেন।’

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, ‘ফরহাদ হোসেনের ভাই মৃদুল আমাদের সংখ্যালঘু এক যুবলীগ সদস্যের এক কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে তাঁকে পথের ভিখারি বানিয়েছেন।’

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য জেমস স্বপন মল্লিক বলেন, ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত সেজেছেন। আপনি তো মেহেরপুরের ক্যাসিনো রানি। ৬৩ জেলার ছেলেদের চাকরি হয়, মেহেরপুর জেলার ছেলেদের চাকরি হয় না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মেহেরপুর জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুল, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর আল মামুন, , সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা, যুবলীগের সদস্য সাজেদুল ইসলাম সাজু প্রমুখ।

গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিশেষ এ মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সংযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

এর পর পরই দলীয় কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন

গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিশেষ এ মতবিনিময় সভার পর পরই দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস। তিনি ফরহাদ হোসেনের পক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ বিভাজিত নয়। আজকে যারা বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেন, তারা কোনো দিন আওয়ামী লীগের বাক্সে ভোট দিয়েছেন কি না, সন্দেহ আছে। এরা সবসময় সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য দেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম শাহিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বুড়িপোতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ জামান, শ্যামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, পিরোজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম বাঁধন প্রমুখ।