বিনা পারিশ্রমিকে মরদেহের গোসল করান আব্দুস সালাম

Looks like you've blocked notifications!
মোংলা পোর্ট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুমারখালী এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম ব্যাপারী। ছবি : এনটিভি

আব্দুস সালাম ব্যাপারী (৫৭) মোংলা পোর্ট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুমারখালী এলাকার বাসিন্দা। পেশায় একজন সাধারণ জাহাজ শ্রমিক। কোথাও কেউ মারা যাওয়ার খবর পেলেই মুহূর্তের মধ্যে সেখানে ছুটে যান তিনি। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই স্বেচ্ছায় মৃত ব্যক্তির শেষ গোসলের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আর এই কাজ ৩০ বছর ধরে করে আসছেন তিনি।

আ. সালাম ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে পরিশুদ্ধ গোসল দিয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেন মরদেহ। দীর্ঘদিন ধরে নিজ হাতে দুই হাজার ৭০০ মৃত মানুষের গোসল করিয়েছেন তিনি। তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মরদেহের গোসল করিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। 

আব্দুস সালাম ব্যাপারী জানান, ২৭ বছর বয়স থেকে তাঁর শ্বশুর মোংলাবন্দর পুরাতন কবরস্থানের মুসলিম আধ্যাত্মিক রহস্যবাদী মোতাহার দরবেশের ছোট ভাই মোমিন মৌলভির কাছ থেকে মরদেহের গোসলের নিয়মকানুন শেখেন। তাঁর শ্বশুরের সঙ্গে অসংখ্য মরদেহের গোসলে সহযোগিতা করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩ মে তাঁর শ্বশুর মোমিন মৌলভি মারা যান। এরপর মরদেহের গোসলের কাজটি এককভাবে করে আসছেন তিনি। তবে এ কাজে কারও কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক নেন না বলেও জানান তিনি। 

আ. সালাম আরও জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মরদেহের গোসল করাতেও পিছপা হননি তিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য মৃত মানুষের শেষ বিদায়ের গোসল করিয়েছেন তিনি। মরদেহের গোসল করানো সওয়াবের কাজ। এখানে ভয়ের কিছু নেই। আল্লাহকে রাজিখুশি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি দীর্ঘ বছর এই কাজ করে আসছেন। 

সালাম ব্যাপারী বলেন, ‘আগে মোংলা শহরে কেউ মারা গেলে আমার শ্বশুরকে ডাকতেন। তখন তার সঙ্গে আমিও যেতাম। এভাবেই সবার মধ্যে পরিচিত হই। এখন এ কাজ একাই করি। মৃত্যুর খবর পেলেই ছুটে যাই সেই বাড়িতে। স্বেচ্ছায় মরদেহের গোসল ও কাফনের কাপড় পরাই। এ ছাড়া পৌর শহরের বাইরেও কেউ ডাকলে ছুটে যাই। তবে এই কাজে সহযোগী হিসেবে আরও দু-একজনের প্রয়োজন হয়। সেই সময় কাউকে ডাকলে ভয়ে কেউ আসে না। পরে একাই এ কাজ করি।’ 

আ. সালামের এমন মানবিক কাজের প্রশংসা করেছেন মোংলার কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবসায়ী আলহাজ মো. হুমায়ুন কবির, স্থানীয় বন্দর ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, সাংবাদিক আহসান হাবিব হাসান। তাঁরা বলেন, কোথাও কেউ মারা গেলে সালাম ব্যাপারীকে ডাকা লাগে না। নিঃস্বার্থভাবে ছুটে যান তিনি। মৃত ব্যক্তিকে শেষ গোসল থেকে শুরু করে কবরে রাখা পর্যন্ত সব কাজে থাকেন তিনি। করোনাকালে সাহসের সঙ্গে অসংখ্য মানুষকে তিনি গোসল করিয়েছেন, দাফনও দিয়েছেন। এটা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যুগে যুগে সালামের মতো অনেক মানবিক মানুষ তৈরি হয়েছে, কিন্তু সমাজ তাদের মনে না রাখলেও পরকালে তারা বড় পুরস্কার পাবেন।

আ. সালাম ব্যাপারীর এমন মানবিক কাজে খুশি হয়ে চলতি মাসে তাঁকে ওমরাহ পালন করিয়ে এনেছেন ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির। এ বিষয়ে আ. সালাম বলেন, মরদেহ গোসলের মতো একটা ভালো কাজ করে আসছিলাম বলেই আল্লাহতায়ালা হয়তো হুমায়ুন কবিরের উছিলায় আমাকে ওমরাহ পালনের তৌফিক দিয়েছেন।  

আ. সালাম ব্যাপারী তিন মেয়ে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন পৌর শহরের কুমারখালী এলাকায়। তাঁর আয়ের উৎস বন্দরে শ্রমিকের কাজ। তবে মহতি এ কাজের জন্য দেড় বছর ধরে ছয় হাজার টাকা করে ভাতা দিয়ে আসছেন পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আ. সালাম ব্যাপারী বলেন, ‘সমাজে অনেক ভালো মানুষ আছেন। তাঁরা চাল, মাছ, ফল ও ওষুধসহ বাজার করে দেন। তা দিয়েই চলে আমার সংসার।’

তবে রাষ্ট্রীয় স্থায়ী কোনো ভাতা পেলে আ. সালাম ব্যাপারী তাঁর তিন মেয়ের জন্য কিছু করে রেখে যেতে চান বলে জানান।