রাজধানীর কোথায় কখন সংঘর্ষ-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, জানাল পুলিশ
বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটেছে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও। সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবল মো. আমিরুল ইসলাম (৩৩), যুবদলনেতা শামীম মিয়া (৪৩) ও বাসের চালকের সহকারী নাজিম (১৮)।
সংঘর্ষের সময় প্রায় অর্ধশতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাজধানীতে গতকাল শনিবার কোথায় ও কখন সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, তার একটি হিসাব দিয়েছে ডিএমপির জনসংযোগ শাখা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি দাবি করছে, শনিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে রমনা পার্কের বিপরীত দিকে এনএসআই ব্যারাকের সামনের সড়কে বৈশাখী পরিবহণ নামে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সাড়ে ১২টায় কাকরাইলে গাজীপুর পরিবহণের একটি বাসে ভাঙচুর করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
ডিএমপির বক্তব্য, দুপুর ১টার দিকে কাকরাইল চার্চের সামনে থাকা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ঢিল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরপর পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
দুপুর দেড়টার দিকে কাকরাইলে আইডিইবি ভবনের নিচতলায় দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুন দেওয়া হয় কাকরাইল জাজেস কমপ্লেক্সের সামনের পুলিশ বক্সে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটকে ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। জাজেস কমপ্লেক্সে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও জানালার কাচ ভাঙচুর। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যারা।
এরপর ২টা ১০ মিনিটে কাকরাইল মোড়ে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। তিনটার দিকে আইডিইবি ভবনের নিচে আরও দুটি গাড়ি ও বিজয়নগরে একটি মোটরসাইকেল আগুন দেওয়া হয়। বিজয়নগরে বধির উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ডিএমপির দুটি কেবিন গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
ডিএমপির দাবি, বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শান্তিনগর মোড়ে চারটি দোকানে ভাঙচুর ও চারটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়। একই সময়ে শান্তিনগর পুলিশ বক্সেও আগুন দেওয়া হয়। শান্তিনগর মোড়ে পুলিশের সাতটি মোটরসাইকেল ছাড়াও একটি কনটেইনারে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলেছে, এরপরে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে ফকিরাপুল পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরে পুলিশ হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় থাকা তিনটি অ্যাম্বুলেন্স, তিনটি জিপগাড়ি, একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ ৯টি গাড়ি ও ২৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই সময় পুলিশ হাসপাতালের বাইরে রাখা পুলিশের ৭টি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়।
বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে মালিবাগ মোড় পুলিশ বক্স ও সিটি করপোরেশনের একটি ময়লাবাহী গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ওই সময় মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে টায়ার জ্বালানো হয়। রাজারবাগে মির্জা আব্বাসের বাড়ির সামনে ১০টি ভ্যান ও রিকশায় অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ডিএমপির ভাষ্য, বিকেল চারটার দিকে মৌচাক মোড়ে ঝুলন্ত ব্যানারে ও মৌচাক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পাইওনিয়ার সড়কে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে উল্টো দিকের ফুটপাতে একটি পিকআপে আগুন দেওয়া হয়। একই সময় সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারের সামনে একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে রাজারবাগে একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ও রাজারবাগ মোড় পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালানো হয়। কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে পুলিশের গাড়ি ও কমলাপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা পরিবহণ নামে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বিকেল পাঁচটায় শাহজাহানপুরে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসেও আগুন দেওয়া হয়।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কাকরাইলে আছিয়া পরিবহণ নামে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। একই সময় ভাঙচুর চালানো হয় রাজারবাগের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। দৈনিক বাংলা মোড়ে কমিউনিটি ব্যাংকের পাশে ফুটপাতে খুপরি দোকান ও খিদমাহ হাসপাতালের সামনে মিডল্যান্ড পরিবহণ নামে একটি ও পুলিশ কনভেনশন হলের সামনে বসুমতী পরিবহণের এক বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পৌনে ছয়টার দিকে কমলাপুরে দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। একটি এশিয়া অন্যটি এস আলম পরিবহণের। একই সময় মিরপুরের কালশীতে ট্রাস্ট পরিবহণ নামে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
এ ছাড়া শনিবার দিনগত রাতে ডেমরায় অছিয়া নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই বাসটির চালকের সহকারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া রাজধানীর আরও দু-একটি স্থানে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।