দুম্বার খামার করে অভাবনীয় সফলতা পেলেন ভৈরবের সবুজ  

Looks like you've blocked notifications!
ভৈরবে সবুজের দুম্বার খামার। ছবি : এনটিভি

মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে সচরাচর দুম্বা দেখা গেলেও নদীমাতৃক বাংলাদেশে এটি খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু, মেঘনা পাড়ের কিশোরগঞ্জের ভৈরবের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুম্বার খামার করে সফলতা পেয়েছেন এক যুবক। শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মো. সবুজ ভূঁইয়ার এ সফলতা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। শুধু তার গ্রামবাসী নয়, আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরেরা সকাল-বিকেল ছুটে আসেন ওই খামার দেখার জন্য। দু’চোখ ভরে দেখছেন দেশের প্রচলিত প্রাণিটি।

আড়াই বছর আগে গড়ে তোলা এই বাণিজ্যিক খামারটি সবুজকে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই লাভবান করেনি, তাকে এলাকাবাসীর প্রশংসাও এনে দিয়েছে।    

স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রান্তিক কৃষকদেরকে সবুজকে অনুকরণ এবং তার সহযোগিতা নিয়ে দুম্বার খামার করে লাভবান হতে পরামর্শ দিয়েছে।

সবুজ জানান, আড়াই বছর আগে দেশের কয়েকটি সীমান্ত এলাকার বাজার ঘুরে তিনি ১০টি দুম্বা সংগ্রহ করে খামার শুরু করেন। প্রথম বছরই দুম্বা বিক্রি করে বেশ মুনাফা পান তিনি।

গত বছরের কোরবানির ঈদে সবুজ তার খামারে উৎপাদিত ২০ থেকে ২৫টি দুম্বা বিক্রি করে এলাকায় অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেন। শুধু তা-ই নয়, নিজের দুম্বার খামারের বিভিন্ন বিষয়ে ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করেন তিনি। রাতারাতি তার খামারের কথা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। দেশের দূরদূরান্ত থেকে মানুষ অনলাইনে পছন্দের দুম্বা কেনার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

সবুজ বলেন, ‘একেকটি মাদি দুম্বা ছয় মাস পরপর অর্থাৎ বছরে দুবার একটি করে বাচ্চা দেয়। আর বাচ্চা দেওয়া শুরু করে আট মাস বয়সে। এক বছর বয়স হলে একেকটি দুম্বা ৫০ থেকে ৮০ কেজির হয়। তখন এক লাখ থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। প্রতিটি দুম্বা থেকে খরচ বাদে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মুনাফা হয়।’

সবুজ আরও বলেন, ‘দুম্বা বাজারে প্রচলিত কোনো দানাদার খাবার খায় না। চারণভূমির প্রাকৃতিক ঘাস এবং চাষের নেপিয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের ঘাসই খেয়ে থাকে। রোগ-বালাই হয় না বলেই চলে। তাই উৎপাদন খরচ ও লালন-পালনের ঝামেলাও নেহায়েতই কম।’

সবুজের খামারে ৪০টিরও বেশি দুম্বা রয়েছে। আগামী কোরবানি ঈদের আগে তার খামারে শতাধিক দুম্বা উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।

এদিকে, সবুজের দুম্বার খামারে স্থানীয় লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। শুধু কাছের মানুষ নয়, আসেন দূরবর্তী গ্রামের লোকজনও।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান তরফদার বলেন, ‘সবুজের এই দুম্বার খামার প্রান্তিক খামারিদের জন্য অনুকরণীয় একটি বিষয়। তার সাফল্য অন্যান্যদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। দুম্বার প্রধান খাবার ঘাস। দুম্বা সাধারণত কৃমি ছাড়া অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয় না। উৎপাদন খরচ খুবই কম। ফলে দুম্বার খামার অতি লাভজনক।’

উপজেলার সফল খামারি সবুজকে সব রকমের সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য যে কেউ দুম্বার খামার করলে সার্বিক সহযোগিতা করে হবে।’