৮১ নাগরিকের বিবৃতির পাল্টা বিবৃতি দিলেন ১৮১ জন
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক বিক্ষোভে সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয় গত ৩১ অক্টোবর একটি বিবৃতি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ৮১ জন বিশিষ্ট নাগরিক গত শনিবার (১১ নভেম্বর) গণমাধ্যমে বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান। সেই বিবৃতির পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৮১ নাগরিক। তারা ৮১ জনের দেওয়া ওই বিবৃতির প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ আবদাল আহমদ আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে তথ্য নিশ্চিত করেন।
সৈয়দ আবদাল আহমদের বিবৃতি বলছে, জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের ৩১ অক্টোবরের প্রেস ব্রিফিংয়ে দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে আওয়ামীপন্থি ৮১ বিশিষ্ট নাগরিকের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন ১৮১ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা বলেছেন, আওয়ামী বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি আমাদের নজরে এসেছে। ওই বিবৃতি সম্পূর্ণ একপেশে।
১৮১ নাগরিক আরও বলেছেন, ‘বিবৃতি পাঠ করে আমাদের মনে হয়েছে, এর উদ্দেশ হচ্ছে, ২৮ অক্টোবরের ঘটনাবলী সম্পর্কে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করা এবং ২৮ অক্টোবরের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে সরকার ও পুলিশের পক্ষে একটি নির্লজ্জ সাফাই তুলে ধরা।’
বিবৃতিতে দেশের এই বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, ‘২৮ অক্টোবর সরকারের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশকে সাউন্ড গ্রেনেড, ছররাগুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল মেরে পণ্ড করে দেয়। এ সময় বিএনপি ও যুবদলের কর্মী, একজন পুলিশ ও একজন সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। আহত হয় অসংখ্য মানুষ। এ ঘটনায় সরকার কয়েকদিনের মধ্যে কয়েকশ মামলা দায়ের করে। বিএনপির মহাসচিব, কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতাসহ হাজার দশেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি কয়েক লাখ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের আতঙ্কে রাখা হয়। নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের না পেয়ে সন্তানসহ অন্য আত্মীয় স্বজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিজেদের পছন্দমতো ব্যবস্থায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি সাজানো নির্বাচন করার যে ঘোষিত নীলনকশা সরকারের ছিল, ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটিয়ে তা পূরণ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পর্যবেক্ষণে তা-ই উঠে এসেছে।’
বিবৃতিতে নাগরিকরা আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ লক্ষ্য করেছে যে, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। সরকারের নানা উসকানির মুখে আগেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে সুষ্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, তাদের কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং মহাসমাবেশ শেষে নেতাকর্মী-সমর্থকরা যার যার ঘরে ফিরে যাবে। মানুষ এও লক্ষ্য করেছে যে, দলীয় সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরেকটি শাপলা চত্বর ঘটানোর এবং লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন। হুমকি দিয়েছিলেন–বিএনপি নেতাদের মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠাণ্ডা করে দেবেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মহাসমাবেশের দিন দেখা গেছে, মিন্টোরোড এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবনের পাশে পুলিশের উপস্থিতিতেই কিছু তরুণ সবুজ রংয়ের লাঠি ও বৈঠা হাতে মহড়া দিয়েছে এবং ভাঙচুর করেছে। পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি। পুলিশের সামনেই বিএনপির সভার পাশ দিয়েই গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের লাঠি বোঝায় গাড়িবহর গেছে। পুলিশ তাতেও বাধা দেয়নি।’
আরও বলা হয়, ‘২৮ অক্টোবর পুলিশ ও সরকারের ক্যাডার বাহিনী পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনা ঘটালেও আওয়ামী বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতিতে সহিংসতার জন্য নানাভাবে বিরোধীদল বিএনপিকে দায়ী করা হয় এবং ওদিন পুলিশ না কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করেছে বলে পুলিশের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়।’
নাগরিক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদেরকে নিজেদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে তাদের বিবৃতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে সরকারের তল্পিবাহক না হয়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ড. তাজমেরি এস এ ইসলাম, সাংবাদিক ড. রেজোয়ান হোসেন সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, কবি ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান, অধ্যাপক ডা. গাজী আবদুল হক, অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন মিয়া, সাংবাদিক এম এ আজিজ, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, সাংবাদিক এম আবদুল্লাহ, সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী, সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাংবাদিক ড. মাহবুব হাসান, অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী, সাবেক সচিব আবদুল হালিম, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক সচিব আবদুর রশিদ সরকার, সাবেক সচিব বিজন কান্তি সরকার, ডা. সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিশ সিমকী, মুহম্মদ জকরিয়া, অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক, প্রকৌশলী আ ন হ আকতার হোসেন, অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. আবদুস সালাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন আহমেদ, কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, কৃষিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেন, সেলিম ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাংবাদিক মমতাজ বিলকিস, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আশরাফ উদ্দিন উজ্জল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিকুল ইসলাম, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, সাংবাদিক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক খুরশীদ আলম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, নূরুদ্দীন নুরু, অধ্যাপক ড. আবদুর রশিদ, অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম, অ্যাডভোকেট আবদুল জব্বার ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী, অ্যাডভোকেট শামীম আখতার, অ্যাডভোকেট আবদুল খালেক মিলন, অ্যাডভোকেট জহিরুল হাসান মকুল, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকবাল, অধ্যাপক ড. মো. আল আমিন, অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক ড. এস এম নসরুল কাদির, অধ্যাপক ড. খন্দকার এমামুল হক (সানজিদ), অধ্যাপক ড. জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক ড. মো. তোজাম্মেল হোসেন, অধ্যাপক ড. সাব্বির মোস্তফা খান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার, অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ, অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম, অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রাজ্জাক, এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান অ্যাপোলো, অধ্যাপক ড. মাসুমা হাবিব, অধ্যাপক ড. এ আর এম মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেসবাহ, অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম তালুকদার, অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমান, অধ্যাপক শেখ মাহমুদুল হাসান, ড. আ ন ম ফজলুল হক সৈকত, অধ্যাপক ড. এম এম শরিফুল করিম, ড. শেখ মনির উদ্দিন ও অধ্যাপক ড. মো. মামুন অর রশিদ, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক ড. মো. রইস উদ্দিন, অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী, ড. শাকিরুল ইসলাম খান শাকিল, অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুল হাসান খান (মুক্তা), অধ্যাপক ড. মো. আলমোজাদ্দেদী আলফেছানি, অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম, দেবাশীষ পাল, অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম রুবেল, অধ্যাপক ড. আবু জাফর খান, অধ্যাপক ড. এটিএম জাফরুল আযম, অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন সরকার, অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মো. শহিদ হাসান, ডা. রফিকুল কবির লাবু, ডা. আব্দুস সালাম, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. এ এ গোলাম মর্তুজা হারুন, ডা. সরকার মাহাবুব আহমেদ শামীম, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, ডা. আজিজ রহিম, ডা. শামিমুর রহমান, ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস, ডা. ওয়াসিম হোসেন, ডা. শাহারিয়ার হোসেন চৌধুরী, ডা. শাহ মোহাম্মদ শাহাজান আলী, ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. রফিকুল হক বাবলু, ডা. এম এ সেলিম, ডা. মো. জসিম উদ্দিন, ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, ডা. খালেকুজ্জামান বাদল, ডা. তমিজউদ্দিন আহমেদ, ডা. আকমল হাবিব চৌধুরী, ডা. মোফাখখারুল ইসলাম, ডা. আজফারুল হাবিব রোজ, ডা. এ কে এম মুসা শাহিন, ডা. কামরুল হাসান সরদার, ডা. শামসুজ্জামান সরকার, ডা. বি গনি ভূইয়া, ডা. শরিফুল ইসলাম বাহার, ডা. মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, ডা. সাইফুল ইসলাম সেলিম, ডা. পরিমল চন্দ্র মল্লিক, ডা. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী, ডা. শেখ আক্তারুজ্জামান, ডা. তৌহিদুর রহমান ববি, ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম, ডা. আমিরুজ্জামান খান লাভলু, ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. নাসির উদ্দিন পনির ও ডা. মো. খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।