নওগাঁয় ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম

Looks like you've blocked notifications!
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবদলনেতা জাহিদুর রহমান। ছবি : এনটিভি

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও যুবদলনেতা জাহিদুর রহমানকে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। গতকাল রোববার (১২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও থানায় কোনো মামলা হয়নি। হামলাকারীদের কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।

গতকাল রোববার হেলমেট ও মাস্ক পরে দুর্বৃত্তরা কার্যালয়ে ঢুকে ইউপি চেয়ারম্যানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।

রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হামলার ওই ঘটনায় থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পারইল ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বারান্দায় ওঠার সিঁড়িতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনের বারান্দাতেও রক্তের দাগ। কক্ষের ভেতরে চেয়ারগুলো এলোমেলো। পড়ে আছে চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত জুতা। কক্ষের ভেতরে মেঝেতে বিভিন্ন জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের চিহ্ন। 

চেয়ারম্যানের ওপর হামলার এই ঘটনার সাক্ষী ইউপি কার্যালয়ের সচিব তরিকুল ইসলাম, হিসাব সহকারী বিমান চন্দ্র সাহা, ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. রনি, গ্রাম পুলিশ সদস্য গোলাপ, রামকৃষ্ণ ও মজিবর।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে হামলাকারীরা মাস্ক ও হেলমেট পরে কার্যালয়ে ঢুকে। হামলাকারীরা প্রথমে ইউপি সচিব ও কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর তারা চেয়াম্যানের কক্ষে ঢুকে জিআই পাইপ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। দেড় থেকে দুই মিনিট হামলা চালিয়ে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। মুখে মাস্ক ও হেলমেট পরে থাকায় কাউকে চিনতে পারেননি তাঁরা।

ঘটনার এক দিন পরও ইউপি সচিব তরিকুল ইসলামের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল ইউপি কার্যালয়ে গ্রাম আদালতের দুটি মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। চেয়ারম্যান সেজন্য সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কার্যালয়ে আসেন। চেয়ারম্যান আসার কিছুক্ষণ পরেই কয়েকটা কাগজে সই করাতে আমি চেয়ারম্যানের রুমে যাই। ওই সময় ইউনিয়নের বরগাছা গ্রামের একজন লোক তাঁর বাবার মৃত্যু সনদ নেওয়ার জন্য সেখানে বসেছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরই মাস্ক পরা একজন লোক রুমে ঢুকে মুত্যুসনদ নিতে আসা ওই লোককে বলে, ‘চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার পারসোনাল কথা আছে। আপনি একটু পরে আসেন।’ ওই লোক বের হয়ে গেলে মুখে মাস্ক ও হেলমেট পরা আরও দুজন লোক রুমে ঢুকে আমাকে চাকু দেখিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে। তখন আমি ভয়ে সেখান থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে ইউপি কার্যালয়ের মূল গেট দিয়ে বাইরে চলে যাই। দেড়-দুই মিনিট পর লোকগুলো বের হয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে চলে যায়।’

হিসাব সহকারী বিমান চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমার রুমের সামনে দিয়ে চেয়ারম্যানের রুমে যাওয়ার সময় দুজন লোক চাকু দেখিয়ে আমাকে বলে, ‘এখান থেকে যাবি, না মেরে দিমু।’ পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমি কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাই। বের হওয়ার সময় কার্যালয়ের সামনে চারটা মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। দুই মিনিট পরই হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে চড়ে উপজেলার আবাদপুকুর বাজারের দিকে চলে যায়। হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যানের কক্ষে একটি জিআই পাইপ ফেলে রেখে গেছে।’

হামলার সময় ইউপি কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়া আদমদীঘি-আবাদপুকুর সড়কে সংস্কারের কাজ করছিলেন ১৮ থেকে ২০ শ্রমিক। আজ দুপুরেও ওই শ্রমিকদের ইউপি কার্যালয় থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে সড়ক সংস্কারের কাজ করতে দেখা যায়। শ্রমিকরা জানান,  গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চারটি মোটরসাইকেলে করে ১১ জন লোক ইউপি কার্যালয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। এ সময় তারা ইউপি কার্যালয়ের সামনের অংশে সড়ক সংস্কারের কাজ করছিলেন। হামলাকারীদের মধ্যে শুধু একজনের মুখে কোনো মাস্ক ও হেলমেট ছিল না। মাস্ক ও হেলমেট ছাড়া ওই ছেলেটা ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী। অন্যদের কারও মাথায় হেলমেট এবং কারও মুখে মাস্ক পরা ছিল। মোটরসাইকেল থেকে নেমেই হামলাকারীরা তাদের ইউপি কার্যালয়ের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।

রাশেদ নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চারটা মোটরসাইকেল নিয়ে ১১ জন লোক আসে। ওরা নিজেদের এমপির লোক বলে পরিচয় দিয়ে কাজ ভালো হচ্ছে না বলে আমাদের কাজ বন্ধ করে দিতে বলে। একপর্যায়ে শাসন-গর্জন করে ইউপি কার্যালয়ের সামনে থেকে সড়কের উত্তর দিকে আমাদের সবাইকে তাড়িয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর শোরগোল শুনে ছুটে এসে শুনি, মোটরসাইকেল নিয়ে আসা লোকগুলা চেয়ারম্যানকে নাকি কোপায়ে চলে গেছে।’ 

বিএনপিনেতাদের অভিযোগ, চলমান আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে অংশগ্রহণ না করে সেজন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। কারা, কী উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছে; তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ব্যক্তিগত রেশারেশি না কোনো নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো সংঘবদ্ধ চক্র এসব ঘটনা ঘটিয়ে চলছে, তা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’