অবৈধ বালু উত্তোলনে পদ্মায় বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি

Looks like you've blocked notifications!
চরতারাপুরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ট্রলার দিয়ে পাঠানো হয় বিভিন্ন এলাকায়। ছবি: এনটিভি

পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুরে পদ্মা নদীতে চলছে প্রভাবশালীদের বালু উত্তোলনের মহাকর্মযজ্ঞ। অবৈধ এ বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে কৃষকের শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করলেও উল্টো কৃষকদেরই হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, চরতারাপুরের ভাদুরিয়াডাঙ্গী এলাকায় পদ্মা নদীতে ১৫ থেকে ২০টি ড্রেজার দিয়ে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

শতাধিক ট্রলারের মাধ্যমে এসব বালু যাচ্ছে পাবনার পাকশী, সুজানগর, কুষ্টিয়ার পাংশা, কুমারখালী ও রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে।

অবৈধ বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শাহীন খান, সাইফুল ইসলাম বাদশা, এনামুল হক, আব্দুল হারুন, সোবহান প্রামাণিকসহ আরও অনেকে জানান, পাবনার সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহীন ও সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হাসানের নেতৃত্বে চলছে এ অবৈধ বালু উত্তোলন। ফলে নদীতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনে প্রতিদিন বিঘা বিঘা ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই এলাকায় ফসলি জমি বলতে আর কিছু থাকবে না! 

তাদের অভিযোগ, এভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন হলেও দেখার যেন কেউ নেই। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় বালুখেকোদের মিথ্যা মামলায় অনেক কৃষককে আটক করা হচ্ছে, পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিয়ে মানববন্ধন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের পাহারায় চলছে অবৈধ এ বালু উত্তোলন। প্রতিবাদ করলেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা। 

খোদ জনপ্রতিনিধিরাই এই প্রভাবশালীদের কাছে অসহায় জানিয়ে চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক বলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বালু উত্তোলনের ফলে আমার ইউনিয়নের কৃষকদের জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।

সুজানগর উপজেলার চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিনের নেতৃত্বে কিছু প্রভাবশালী এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এর আগে পদ্মা পাড়ে মানববন্ধনে পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা সত্যি যে, সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে এখানে বহুদিন ধরেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।  এরা স্বার্থান্বেষী মহল, নিজেদের স্বার্থের জন্য দলের নাম ব্যবহার করে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি এটা (বালু উত্তোলন) বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করব।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত দোগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। অপরদিকে বিষয়টি অস্বীকার করে সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহীন বলেন, আমরা নাম তো দূরের কথা চরতারাপুরে তো বালুই উত্তোলন হচ্ছে না। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি নিজেই নিজের ফাঁসি নেব।

এ বিষয়ে পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিদা আক্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, যখন মানববন্ধন হয়েছিল সেখানে আমি গিয়েছিলাম। তখন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। কৃষকদের আমি বলেছিলাম আবার বালু উত্তোলন করলে আমাকে জানাতে। কিন্তু তারা পরে আর কিছু জানায়নি।

ওই অঞ্চলে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি জানিয়ে ইউএনও তাহমিদা আক্তার বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, বর্তমান আন্দোলন-সহিংসতার কারণে নদীর দিকে ওইভাবে নজর দেওয়ার সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ, নৌ-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।