খুলনা ক্লাবের তিনটি ব্যাংক হিসাব স্থগিত এনবিআরের

Looks like you've blocked notifications!
খুলনা ক্লাব। ছবি : এনটিভি

খুলনা ক্লাব মাদকদ্রব্য বিক্রির সাত বছর ভ্যাট না দেওয়ায় অভিযান চালিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা টিম। এ সময় জরিমানাসহ চার কোটি ৬০ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ না করায় ক্লাবের তিনটি ব্যাংক হিসাবসহ বিকাশ হিসাবে লেনদেন স্থগিত করা হয়।

খুলনা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ডা. কাজী আরিফ আহমেদ এবং বিভাগীয় ভ্যাট কমিশনার সৈয়দ আতিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সমাজের বিত্তবান এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত খুলনা ক্লাব। এটি ব্রিটিশ আমলে শহরের অভিজাত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে এই ক্লাবের সদস্য সাত শতাধিক। সদস্য হতে হলে স্নাতক পাস, আর্থিক স্বচ্ছলতাসহ দুই থেকে ২০ লাখ টাকা ডোনেশন দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ক্লাবের আয়ের উৎস বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ-বিয়ার বিক্রি, যা বার হিসেবে পরিচিত। অতীতে এই ক্লাব অভ্যন্তরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি ক্লাব অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে কোন পোশাক পরিধান করতে হবে, তাও নির্দিষ্ট ছিল।

এক সময় পদাধিকার বলে বিভাগীয় কমিশনার এই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট বাকি নির্বাহী কমিটির সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে আসতেন। কিন্তু খুলনা ক্লাব লিমিটেড হওয়ার পর এখন সরাসরি নির্বাচনে বা সিলেকশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

খুলনা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ডা. কাজী আরিফ আহমেদ জানান, এনপিআরের নিয়ন্ত্রণাধীন ভ্যাট গোয়েন্দা তদন্ত টিম তাদের অডিট রিপোর্ট দেখে ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভ্যাট না দেওয়ায় দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা ভ্যাট এবং দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাসহ (সুদসহ) মোট চার কোটি ৬০ লাখ টাকার দাবিনামা জারি করে ২০২৩ সালের ৭ জুলাই। এই দাবি করা টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করায় ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে খুলনা ক্লাবের পিমিয়ার ব্যাংক লি. সাউথইস্ট ব্যাংক লি., সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকসহ বিকাশ হিসাবে লেনদেন বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে।

খুলনা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট কাজী ডা. অরিফ আহমেদ জানান, ভ্যাট দাবি ও জরিমানার দাবিনামার বিরুদ্ধে তারা আপিল করেছেন। যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি জানান, ২০১৯ সাল থেকে তাঁরা নিয়মিত ভ্যাট পরিশোধ করে আসছেন। যখন প্রয়াত ঈসা গাজী এই ক্লবের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন থেকেই ভ্যাট নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয় ।

খুলনা ক্লাবের একজন সিনিয়র সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মেয়াদ শেষে নির্বাহী পরিষদের নির্বাচন হওয়ার বিধান রয়েছে গঠনতন্ত্রে। নতুন সদস্যপদ দেওয়ার সময় নির্বাহী পরিষদ সদস্যদের ভেটো দেওয়ার কথাও রয়েছে গঠনতন্ত্রে। কিন্তু অনেক সদস্য শুধু টাকা আর রাজনৈতিক প্রভাবে ক্লাবের সদস্য হয়েছেন। অথচ পাকিস্তান আমলে তৎকালিন কেন্দ্রীয় যোগাযোগমন্ত্রী খুলনা ক্লাবের সদস্য হতে না পেরে নিজে ইউনাইঢেড ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। আর সব থেকে বড় অনিয়ম আগে সদস্যদের ভোটে কর্মকর্তা নির্বাচিত হতেন কিন্তু গত এক দশকের বেশি সময় ধরে নির্বাচনের পরিবর্তে সিলেকশ প্রথা চালু হওয়ায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ভোটে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের ভোটারের কাছে জবাবদিহিতা থাকে, যা এখন নেই। সিলেকশন কালচার চালু হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি বলেও অভিমত তাঁর।

এ ব্যাপারে খুলনার ভ্যাট কমিশনার সৈয়দ আতিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এনবিআরের গোয়েন্দা টিম তদন্ত করে চার কোটি ৬০ লাখ টাকা ভ্যাট আদায়ের চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে জরিমানাসহ ভ্যাট জমা না দেওয়ায় তাদের তিনটি ব্যাংক ও বিকাশ হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে।