রাজনীতির উত্তাপ ও জঙ্গি পলায়ন আতঙ্কে আদালতপাড়া

Looks like you've blocked notifications!

রাজনৈতিক কারণে ২০২৩ সালে সারা বছর ধরে নিম্ন আদালত উত্তপ্ত ছিল। রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে আদালতপাড়া থেকে জঙ্গিদের পলায়নও বেশ উদ্বেগ ছড়িয়েছে। পাশাপাশি ছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে সাজা। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের উদ্দেশে ২০২৩ সালে আদালতপাড়ায় ঘটে যাওয়া কিছু আলোচিত ঘটনার উল্লেখ করা হলো।

নাইকো মামলা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারাধীন নাইকো দুর্নীতি মামলা নিষ্পত্তিতে বেশ তোড়জোড় দেখা গেছে। গত ১৯ মার্চ নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান। এরপর দ্রুততার সঙ্গে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। নাইকো মামলায় রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের দুই সদস্য ও এফবিআইর কর্মকর্তাও কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে সাক্ষ্য দেন।

তারেক-জোবাইদার কারাদণ্ড

২০২৩ সালে আলোচিত ঘটনার মধ্যে এটি একটি। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এ বছরই প্রথম কোনো সাজার রায় ঘোষণা হয়। দুদকের করা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় গত ২ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছর ও ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তাকে তিন কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে জোবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া তাকে জরিমানা ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তারেক রহমানের দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রীয় অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবাইদা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। গত বছর এ মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রুল খারিজ করেন হাইকোর্ট। এরপর গত ১৩ এপ্রিল এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর ২১ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বিচার শুরুর আড়াই মাসের মধ্যেই তাদের সাজার রায় দেওয়া হয়। এই মামলার বিচারককে ঘিরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

নাশকতার মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজার হিড়িক

গত বছর ১০ ডিসেম্বর কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘর্ষ ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাটিয়ে চলতি বছর ফের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ইস্যুতে একদফার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। তাদের ডাকে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নয়াপল্টনে বিএনপির সেই সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়। এরপরে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০ দিনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৩ হাজার ৪৬০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময়ে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬৮৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ শীর্ষ অনেক নেতা রয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর এসব নেতাকর্মীর আদালতে হাজির করাকে ঘিরে পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায় ছিল রাজনীতির উত্তাপ। আর গত ১৬ সপ্তাহে দলের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে দলের এক হাজার ৪৮২ নেতাকর্মীর। এসব রায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মো. শাজাহান, কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের বর্তমান সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি আকরামুল হাসান মিন্টু, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনু প্রমুখ। এর মধ্যে সোহেল, টুকু, নীরবসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় কারাদণ্ড হয়েছে।

মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানির দিন ককটেল বিস্ফোরণ

নাকশতার মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামিন শুনানির দিন অর্থাৎ গত ২০ নভেম্বর বিকেল ৪টায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিকট শব্দে একটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। যার কিছু সময় আগেই একই আদালতে প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলার ঘটনায় রমনা থানার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মামলার জামিন শুনানি ছিল। শুনানিকে ঘিরে আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতে হট্টগোলও করেন। যদিও সেদিন আর জামিন শুনানি হয়নি।

আদালত থেকে দুই জঙ্গির পলায়ন

২০২৩ সালে পুলিশের চোখে স্প্রে করে আদালত থেকে পালিয়ে যায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুই সদস্য। এ ঘটনাও বিদায়ী বছর আদালতপাড়ায় বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। পাশাপাশি আদালতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। এ ঘটনার পর বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা যায়। পলাতক দুই জঙ্গি হলো- মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব। পলাতক দুই জঙ্গিই জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।