বছরের প্রথম দিন চালু হচ্ছে না মোংলা-খুলনায় রেল

Looks like you've blocked notifications!
মোংলা-খুলনা রেলপথের মোংলা স্টেশন। ছবি : এনটিভি

কথা ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে মোংলা-খুলনা রুটে যাত্রীবাহী রেল চলবে। সেই হিসেবে রেল চলাচলের সময় সূচিও ঠিক হয়েছিল যশোর থেকে ফুলতলা হয়ে প্রতিদিন দুইবার মোংলায় যাতায়াত করবে যাত্রীবাহী রেল। তাই জোরেশোরে চলছিল শেষ সময়ের প্রস্তুতিও। নতুন এই রেলপথ নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল যাত্রীরাও। কিন্তু আগামীকাল সোমবার (১ জানুয়ারি) বাজছে না রেলের সেই হইসেল।

দ্রুত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে কবে নাগাদ ট্রেন চলবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 

মোংলা-খুলনা রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান আজ রোববার দুপুরে জানান, পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে খুলনা-মোংলা রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে না। কবে নাগাদ চলবে তার সঠিক দিনক্ষণও ঠিক হয়নি। তবে ট্রেন না চলার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার যথা সময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারায় এখনই ট্রেন চলছে না। 

জানা গেছে, মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ সহজ করতে ২০১০ সালে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন হলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। রেলপথ, রেলসেতুসহ মূল রেল লিংকিংয়ের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের অক্টোবরে। ৯১ কিলোমিটার রেলপথের পাশাপাশি রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু, ১১টি প্লাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১টি ছোট ব্রিজ ও নয়টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।

নির্মাণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ১ নভেম্বর ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন এই রেলপথ। অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চালুর। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই এই পথে রেল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। যশোর থেকে ফুলতলা হয়ে মোংলায় আসবে প্রতিদিন দুটি ট্রেন। সহজ যোগাযোগ মাধ্যম হওয়ায় নতুন এই রেলপথ নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল খুলনা, যশোর ও মোংলা অঞ্চলের যাত্রীরা।

মোংলা ইপিজেডে কাজ করেন খুলনার বয়রা এলাকার বাসিন্দা ওবায়দুল। তিনি বলেন, এই রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় ছিলাম। সকালে ট্রেনে ইপিজেড স্টেশনে নেমে কাজ শেষ করে আবারও ট্রেনে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো অনিশ্চিতয়তার মুখে পড়লাম। তিনি আরও বলেন, শুধু আমি না, আমার মতো আরও অনেকে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর ও মোংলা ইপিজেডে কাজ করতে খুলনা থেকে মোংলায় যাতায়াত করেন।

মুরাদ হাওলাদার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, নতুন রেলপথ আমাদের এই অঞ্চলের যোগাযোগে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে। এতে আমরা দারুণ খুশি ছিলাম। যাত্রা শুরুর প্রথম দিনেই আমি এই রেলে উঠতে চেয়েছিলাম।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় সমিতির মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরুর বিষয়টি আমাদের জন্য দারুণ সুখবর ছিল। তবে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছি এই পথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করছেন এই পথ দিয়ে ভারতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য। এই রেলপথ চালুর মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। আর তাতে এ অঞ্চলের অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এদিকে রেল চলাচলের সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, মূল রেল লিংকিং কাজ আমরা আগেই সম্পন্ন করেছি। এখন শেষ দিকের কিছু কাজ বাকি। যেগুলো আমরা বলছি ফিনিশিং কাজ। এখন টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংয়ের কিছু কাজ চলছে। যা দ্রুত শেষ হবে।

ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় চার হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ রেলপথটি নির্মাণ করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি ও ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।