শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন আর নেই

Looks like you've blocked notifications!
শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েন উদদীন। ছবি : সংগৃহীত

বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেটের পূর্বরাজাবাজারস্থ নিজ বাসায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। শিশু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

খালেক বিন জয়েনউদদীনের ছোট ছেলে পল্লব ইয়াসির এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কখন মারা গেছে আমরা সঠিক সময় বলতে পারব না। উনি রাতে নিজ রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। সকালে ঘুম থেকে না ওঠায় খোঁজ নিতে গিয়ে তাকে খাটের পাশে নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পল্লব ইয়াসির আরও বলেন, আগামীকাল সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেওয়া হবে। এরপর তার গ্রামের বাড়ি কোটালীপাড়ায় চিত্রাপাড়া গ্রামে নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।

খালেক বিন জয়েনউদদীন ১৯৫৪ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আলহাজ মো. জয়েনউদ্দীন। খালেক বিন জয়েন উদদীন সীতাইকুণ্ড উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকার আবুজর গিফারী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বাংলা বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৭৫ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। সাহিত্য অঙ্গনে খালেক বিন জয়েনউদদীন নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম আবদুল খালেক ফকির।

খালেক বিন জয়েনউদদীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোরের বারোবাজারে পাকিস্তানি সেনা ছাউনিতে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন এবং সাতমাস বন্দি থাকেন। চাকরি করেছেন জাতীয় জাদুঘর ও বাংলাদেশ বেতারে। দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরের বিভাগীয় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় দুই দশক। জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হবার পর ছড়া লিখে প্রতিবাদ করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে সেই ছড়া প্রকাশিত হয় মাসিক সমকালে। ইতিহাসের বিপর্যয় ও বিকৃতির বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক সক্রিয় ছিলেন। 

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো– ‘ধান সুপারি পান সুপারি’, ‘আপিল চাপিল ঘন্টিমালা’, ‘চিরকালের ১০০ ছড়া’, ‘হৃদয়জুড়ে বঙ্গবন্ধু’, ‘নলিনীকান্ত ভট্টশালী’, ‘হুমায়ুননামা’, ‘মায়ামাখা শেখ রাসেল’, ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেল’, ‘সাকিন টুঙ্গিপাড়া’, ‘কন্যে তুমি শেখ হাসিনা’, ‘একাত্তরের মিত্রমাতা ইন্দিরা গান্ধী’, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ’, ‘আতা গাছে তোতা পাখি’, ‘বঙ্গবন্ধু এবং রক্তাক্ত বাংলা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান’, ‘একাত্তরের অশোক’, ‘টুঙ্গিপাড়া ও বত্রিশ নম্বরের সেই মানুষটি’, ‘বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলার গল্প’, ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু’, ‘বাংলাদেশের গণহত্যা ’৭১’, ‘ছোটদের বঙ্গবন্ধু’, ‘ছোটদের নজরুল’, ‘একাত্তর, পঁচাত্তর এবং বাংলাদেশ’ ।

অসংখ্য গ্রন্থের রচয়িতা খালেক বিন জয়েনউদদীন সাহিত্যচর্চার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার, সাউন্ডবাংলা সম্মাননা, তরিকত মিশন, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ স্মৃতি পরিষদ, কোটালীপাড়া গুণীজন সংবর্ধনা লাভ করেন।