নির্বাচনে এক প্রার্থীই ব্যয় করেছেন ৩৮ কোটি টাকা : টিআইবি

Looks like you've blocked notifications!

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তুলনামূলক বেশি ব্যয় করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। শুধু তাই নয়, তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে মিলিয়ে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীই ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ১৪৪ টাকা ব্যয় করেছেন। তবে টিআইবি তার নাম প্রকাশ করেনি।

আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয়ে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সর্বোচ্চ ব্যয়কারী ওই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নাম প্রকাশ করব না। তবে সরকারি কোনো সংস্থা জানতে চাইলে আমরা জানাব।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচনি নীতিমালায় নির্বাচনকালীন ব্যয় একজন প্রার্থীর জন্য ২৫ লাখ টাকা নির্ধারিত থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেটি লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

তফসিল ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা গড়ে ব্যয় করেছেন এক কোটি ৬৭ লাখ ৮০ হাজার ১০২ টাকা। আর নির্ধারিত সময়ে ব্যয় করেছেন এক কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ১৬৭ টাকা। এমনও দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে মিলিয়ে শুধু একজন প্রার্থীই ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ১৪৪ টাকা ব্যয় করেছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন মাহফুজুল হক, নেওয়াজুল মাওলা ও সাজেদুল ইসলাম। গত বছর জুন থেকে চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা করা হয়েছে বলে জানায় টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করেন মাহফুজুল হক ও নেওয়াজুল মাওলা।

গবেষণায় বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পূর্ব থেকে নির্বাচন পর্যন্ত নির্ধারিত ব্যয়সীমার বেশি ব্যয় করেছেন ৬৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রার্থী। প্রার্থীদের নির্বাচন ব্যয় ২৫ লাখ টাকা হলেও দ্বাদশ নির্বাচনে তা হয়েছে গড়ে এক কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭ টাকা, যা নির্ধারিত পরিমাণের ছয় গুণ বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা, ১১ দশমিক ৪৫ গুণ বেশি। বিজয়ী প্রার্থীরা গড়ে তিন কোটি ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৪৩৮ টাকা ব্যয় করেছেন। বিজয়ী একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ১৪৪ টাকা ব্যয় করেছেন। সর্বনিম্ন একজন প্রার্থী ব্যয় করেছেন ১৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

গবেষণায় আরও বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মোট ব্যয় শুরুতে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ধরা হলেও তা পরে বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। যা একাদশ নির্বাচনের খরচ থেকে তিনগুণ বেশি, নির্বাচন কমিশনের বাজেটের অর্ধেকের বেশি। ৫৪ শতাংশ অর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য খরচ হলেও তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) রাত ৮টার সংবাদে প্রধানমন্ত্রী, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীকে নিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক খবর প্রচার হয়েছে। যার ব্যয় প্রায় তিন কোটি টাকা। এ ছাড়া বিটিভিকে একচেটিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতেও সরকার দলীয় নেতাদের বক্তব্য বেশি প্রচার হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সারা দেশের ৫০টি আসনে ১৪৯ জন প্রার্থীর ওপরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো না কোনো ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ আগে কখনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ মনোনীত শতভাগ প্রার্থী কোনো না কোনো আচরণবিধি ভেঙেছে।

টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভোটারদের অর্থ প্রদান এবং তাদের ওপর বল প্রয়োগ করেছেন ৪০ শতাংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ ঘটনায়, জোর করে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে ৫৫ শতাংশ ভোটারকে, বুথ দখল ও সিল মারার ঘটনা ৫১ শতাংশ।

গবেষণার সার্বিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দুই বড় দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি। এ বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানকেন্দ্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জিম্মি দশা প্রকটতর হয়েছে। ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। যার আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়তো হবে না, বা হলেও টিকবে না। তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।’ 

গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ধারণা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার অন্যতম উপাদান অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সর্বোপরি সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিতের যে পূর্বশর্ত, তা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিপালিত হয়নি বলে দাবি করেন ইফতেখারুজ্জামান।