নেতাকর্মীদের কারামুক্তির পথ খুঁজছে বিএনপি

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য হলো গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি। ছবি : ডয়চে ভেলে

বিএনপির এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য হলো গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি। এরপর নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে চায় দলটি। কীভাবে মিলবে এই মুক্তি? সেই পথ খুঁজছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ কারণে এখন তারা কঠোর কোনো কর্মসূচি করছেন না। অন্যদিকে সরকার ‘সফলভাবে’ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারায় অনেকটাই ‘নমনীয়’। ফলে শিগগিরই মুক্তি মিলতে পারে বিএনপি নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ সপ্তাহেই মুক্তি পেতে পারেন।

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যাপারে সরকার কি এখন নমনীয়? জানতে চাইলে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখানে নমনীয় বা শক্ত হওয়ার বিষয় নেই। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেগুলো আইনের নিজস্বগতিতে চলবে। জামিন দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষের যে ধরনের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন সেটা থাকবে। সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিরোধী দলের প্রতি ক্ষমতাসীন দল এখন অনেকটাই নমনীয়। কারণ সরকারি দল আওয়ামী লীগ বিএনপিকে বাইরে রেখে যেভাবে নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল সেটা তো তাদের সফল হয়েছে। নির্বাচনের পর বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা বা গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া কমে এসেছে। ফলে এখন সরকার চাইলে তো তাদের জামিন হতেই পারে। রাষ্ট্রপক্ষ নমনীয় হলেই সেটা সম্ভব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘মামলার কারণে তো আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আছেন। তাদের মুক্ত করাটা এখন আমাদের প্রধান কাজ। আমরা তাদের মুক্তির চেষ্টা করছি। দেশের মানুষ তো জানেন বিচারালয় এখন সরকারের কব্জায়।’

এই কারণে কি বিএনপি কঠোর কোনো আন্দোলনে যাচ্ছে না? জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন চলমান। শিগগিরই আপনারা কর্মসূচি দেখতে পাবেন। এটার সঙ্গে জামিনের সম্পর্ক নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি, যত দ্রুত সম্ভব নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে।’

বিএনপির দাবি, সারা দেশে এক লাখ ১১ হাজার মামলায় দলের প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অনেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না, বাড়িঘরে থাকছেন না, গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন নেতাকর্মীদের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আনাই বিএনপির মূল লক্ষ্য। প্রায় ২৭ হাজার নেতাকর্মী এখনো কারাবন্দি বলে দাবি বিএনপির। তবে এই পরিসংখ্যান মানতে রাজি নয় সরকার। সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১২ হাজারের মতো হবে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে নতুন কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না দেখালে চলতি সপ্তাহে মুক্তি পেতে পারেন। তারা জামিন পেলে একই ধরনের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত অন্য কারাবন্দি নেতাকর্মীরও জামিন পাওয়ার পথ খুলে যাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির আইনজীবীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘কৌশলী অবস্থান’ নিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোও। এ মুহূর্তে আন্দোলনের বড় ধরনের নতুন কোনো কর্মসূচি না দিয়ে নেতাকর্মী কারামুক্ত করাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে তারা।

ইতোমধ্যে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে নেতাকর্মীদের কারামুক্তির ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনি সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে একই নির্দেশনা দেওয়া হলেও দলের সংশ্লিষ্ট শাখার নেতারা গ্রেপ্তার নেতাদের পাশে দাঁড়াননি। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কারাবন্দি দুই জন ছাত্রনেতার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দল থেকে যথাযথ আইনি ও আর্থিক সহায়তা না দেওয়ায় তাদের পরিবার ধারদেনা করে আইনি লড়াই চালাচ্ছে। ‘আইনি সহায়তা সেল’ গঠনের সিদ্ধান্ত থাকলেও এতদিনেও তা হয়নি।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়েছিল। কারাবন্দি কেউ চুরি-ছিনতাইয়ের মামলার আসামি নন। তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে তার আইনগত ভিত্তি নেই। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন তার নিজস্বগতিতে চললে বিএনপি মহাসচিবসহ কারাবন্দি সব নেতাই এতদিন জামিন পেয়ে যেতেন। যে মামলায় জামিন পেয়ে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেছেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, সেই একই মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ অনেক নেতা কারাগারে আছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই মামলা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হবে।’

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। সেই সমাবেশ পন্ড হয়। এরপর থেকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও পুলিশ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ১ হাজার ১৭৫ নাশকতার মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি করা হয় এক লাখ ৫ হাজার ৭৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে। গণহারে ২৭ হাজার ৪৮৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।

বিএনপির আইন শাখা বলছে, চলতি সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আরেকটি মামলায় জামিন শুনানি হবে। রাজধানীর পল্টন মডেল থানার নাশকতার আরেক মামলায় গত ১৭ জানুয়ারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালত। বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তাহমিনা হক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১ মামলার মধ্যে ১০টিতে জামিন পেলেন তিনি। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলায় জামিন পেলেই কারামুক্ত হতে পারবেন তিনি।

অন্যদিকে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল হত্যাসহ পল্টন ও রমনা থানায় দুই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গত ১৭ জানুয়ারি জামিন দিয়েছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম তাহমিনা হক ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। এদিন রমনা ও পল্টন মডেল থানার পৃথক চার মামলায় তার ঢাকার আদালতে গ্রেপ্তার ও জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য রয়েছে। শুনানিতে জামিন মঞ্জুর হতে পারে বলে আশাবাদী আইনজীবীরা। তাহলেই মুক্তি মিলবে তার। শুধু এই দুই নেতা নন, অধিকাংশ নেতার একাধিক মামলায় জামিন হয়েছে। আর একটি দুটি মামলায় জামিন হলেই মুক্তি মিলবে।