ডিএমপির পথচলার ৪৯ বছর আজ

Looks like you've blocked notifications!

‘সেবা ও সদাচার, ডিএমপির অঙ্গীকার’- এই প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে নানা আনুষ্ঠানিকতায় আজ বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) উদযাপিত হবে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের ৪৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এ উপলক্ষে নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পুলিশের সবচেয়ে বড় এ ইউনিটটি।

আজ সকালে ডিএমপির ৪৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সুধী সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ ছাড়া পুলিশ প্রধান এবং ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন।

১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বীর পুলিশ সদস্যরা প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এরপর দেশপ্রেমিক বাঙালি এবং অকুতোভয় বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রামের মাধ্যমে রচিত হয় স্বাধীনতা অর্জনের কালজয়ী ইতিহাস।

১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে রাজারবাগের এবং পুলিশের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’ জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং তিনিই ঢাকা মহানগর পুলিশের স্বপ্নদ্রষ্টা।

১৯৭৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি ৬ হাজার পুলিশ সদস্য এবং ১২টি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ডিএমপি। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ঢাকা মহানগরীর প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ সম্মানিত নাগরিকগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ডিএমপির কার্যক্রম ৫০টি থানায় বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে কাজ করছেন ৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি), ১২ জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অতি. ডিআইজি), ৫৭ জন উপকমিশনারসহ (এসপি) ৩৪ হাজার অফিসার ও ফোর্স।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ডিএমপির সার্ভিসসমূহ সহজীকরণ এবং দ্রুত স্মার্ট পুলিশিং সেবা প্রদানে বর্তমান কমিশনার মহোদয়ের সৃষ্টিশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল মেসেজ টু কমিশনার (M2C), যার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর সম্মানিত নাগরিকগণ আইনি সেবা, পরামর্শ এবং অপরাধ বিষয়ক তথ্য প্রদানের জন্য ০১৩২০-১০১০১০ অথবা ০১৩২০-২০২০২০ নম্বরে সরাসরি বার্তা প্রদান করতে পারেন।

মহানগরীর সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ, নির্ভয় ও নির্বিঘ্ন ঢাকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছে ৮টি ক্রাইম বিভাগ এবং ৫০টি থানা। ২০২৩ সালে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় অপরাধ দমন ও উদঘাটনে সর্বমোট ২৫ হাজার ৯০২টি মামলা রুজু করা হয়েছে। বর্তমান কমিশনারের উদ্যোগে ছিনতাই প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘ছিনতাই প্রতিরোধ টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমন ও উদঘাটন ব্যবস্থা গড়ে তোলার নিমিত্তে ২৫ হাজার ৯০২টি মামলার সব তথ্য CDMS (Crime Data Management System)-এ সন্নিবেশ করা হয়েছে। সকলের জন্য সমান আইনি সেবা নিশ্চিতকল্পে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী হেল্প ডেস্ক থেকে ৪০ হাজার ১৮২ জনকে সেবা প্রদান তদারকি করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে মামলার রায় প্রদান এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাজার হার বৃদ্ধিকরণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রসিকিউশন বিভাগ আদালত সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম CDMS অর্ন্তভুক্ত করার যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলশ্রুতিতে গত এক বছর প্রসিকিউশন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আদালত কর্তৃক বিচারাধীন মামলার মধ্যে ১৫ হাজার ৫৩৭টি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। যেখানে ৪,৭৫৬ জন অপরাধীর সাজা হয়েছে।

ডিএমপির সদর দপ্তর ও প্রশাসন বিভাগের অধীন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, প্রবাসী লিগ্যাল সার্ভিস, কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ দপ্তর, ইন্টারনাল ওভারসাইট, মেসেজ টু কমিশনার (M2C), কেন্দ্রীয় রিসিভ ডেসপাস শাখা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডিএমপির পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস সেল থেকে ২০২৩ সালে মোট ৫৩ হাজার ২৮৯টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে যার মধ্যে ৭২ ঘণ্টায় ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে ২৬ হাজার ৪৭৫টি আবেদনের। প্রবাসী লিগ্যাল সার্ভিস সেলে প্রবাসীদের কাছ থেকে ২০২৩ সালে প্রাপ্ত ১৪৫টি অভিযোগের মধ্য থেকে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১১৪টি এবং ৩১টি অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।

ডিএমপির ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) জনগুরুত্বপূর্ণ, চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস মামলার তদন্তে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে আসছে। মামলা তদন্তের পাশাপাশি মাদকদ্রব্য, চোরাইগাড়ি, জাল টাকা, চোরাই মোবাইলফোন উদ্ধারে মাইলফলক অর্জন করেছে। এ ছাড়া সাইবার অপরাধী ও সংঘবদ্ধ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। ডিবির নিরলস প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অনলাইন প্রতারক, অনলাইন জুয়া, ব্লাকমেইলকারী অবৈধ বেটার, হ্যাকার এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিশ্বের ৬ষ্ঠ ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা মহানগরীর যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে ডিএমপির ট্রাফিক ইউনিট। বিগত পাঁচ বছরে সড়কে শৃংঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আধুনিক e-Traffic Prosecution ব্যবস্থায় POS ডিভাইসের মাধ্যমে ২৭ লাখ ২২ হাজার ২৯৫টি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৩ সালে প্রতি মাসে গড়ে ২০০টি সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (CTTC) বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে আজ বিশ্বের রোল মডেল। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিটিটিসি ২৭টি হাইরিস্ক অপারেশন পরিচালনা করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি ১ হাজার ৬১৯টি মামলায় ২ হাজার ২৪৭ জন উগ্রবাদী সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। ২০২৩ সালে সিটিটিসি জঙ্গিবাদে জড়িত ৩৮ জন সদস্যের ডি-রেডিক্যালাইজেশন কাউন্সেলিং কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এবং ১৭ জন উগ্রবাদীকে পুনর্বাসনে সহায়তা প্রদান করেছে। সিটিটিসি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সমন্বয়পূর্বক সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে ৯টি গবেষণাকর্ম  সম্পন্ন করেছে।

ডিএমপি প্রটেকশন বিভাগ স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার ঘোষিত বিদেশি ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। ২০২৩ সালে প্রটেকশন বিভাগ ৮৪ জন বিদেশি ভিভিআইপি ডেলিগেটের নিরাপত্তা দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক দেশে অনুষ্ঠিত ৯টি সম্মেলন এবং ২১টি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীদের আবাসিক হোটেল কেন্দ্রিক নিরাপত্তা এবং গমানাগমনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এস্কর্ট প্রদানের মাধ্যমে নিরাপত্তা  নিশ্চিত করা হয়েছে।

ডিএমপির ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগ অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে মহানগরীতে অবস্থিত বিশ্বের ৫০টি দেশের দূতাবাস/হাইকমিশন, অ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনারগণের বাসভবন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে। ডিএমপির সচিবালয় নিরপিত্তা বিভাগ দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণী কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের অভ্যন্তরে এবং বহিঃবেষ্টনীর নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ডিএমপির সুপ্রিম কোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল কোর্ট সিকিউরিটি বিভাগ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে পালন করে আসছে।

ঢাকা মহানগর এলাকায় সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের সংবেদনশীলতা ও অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। ২০২০ সালে এই ডিভিশনে কুইক রেসপন্স টিম (QRT) এবং হট লাইন (০১৩২০০৪২০৫৫) সেবা চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে সংবাদ প্রাপ্তির পর দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিম উদ্ধারপূর্বক আইনি সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।

একটি শক্তিশালী সফল সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই। ডিএমপির প্রতিটি সদস্যের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের উন্নয়নে কাজ করছে পিআর অ্যান্ড এইচআরডি বিভাগ। ২০২৩ সালে পিআর অ্যান্ড এইচআরডি বিভাগ থেকে ৪৭টি কোর্সে ১৭৯টি ব্যাচে মোট ৩৩ হাজার ৮৩৫ জন পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ এই নীতিকে ধারণ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ তার প্রতিটি সদস্যকে উত্তম কাজের জন্য পুরষ্কৃত করে থাকে। অপরপক্ষে ডিএমপির কোনো সদস্য যদি আইন ও বিধি পরিপন্থি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অতি সত্বর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

অপরাধ প্রতিরোধ ও নিবারণে পুলিশ ও জনতার সমন্বিত উদ্যোগে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে– ‘পুলিশ-জনতা ঐক্য করি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে ডিএমপি কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করেছে। বিট পুলিশিং এর আওতায় ৩০৬টি বিটে কর্মরত বিট অফিসারগণ ঢাকা মহানগরীতে বসবাসরত সকল নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করে CIMS (Citizen Information Management System) সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত CIMS এ ৪ কোটি ১৪ লাখ ৮২ হাজার ৩১৪ জন নাগরিকের তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। কিশোর অপরাধ, নারী নির্যাতন, জঙ্গিবাদ প্রভৃতি বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিট অফিসারগণ ২৮ হাজার ৯৭৮টি উঠান বৈঠক সম্পন্ন করেছেন।

‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিরাপদ ঢাকা মহানগরী গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।