এস আলমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারবে দুদক : আপিল বিভাগ

Looks like you've blocked notifications!

এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে বিদেশে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার পাচারের অনুসন্ধান নিয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এ আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ ও দুদক চাইলে এখন ওই অভিযোগ অনুসন্ধান করতে পারবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কিউসি ও আহসানুল করিম। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। পত্রিকার খবর নজরে আনা আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক শুনানিতে অংশ নেন।

আবেদনকারীদের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘সুয়োমটো রুল খারিজ হওয়ায় হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ থাকছে না। তবে দুদক ও বিএফআইইউ যদি মনে করে তাহলে আইন অনুসারে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে বাধা নেই।’ 

শুনানির বিষয়ে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘হাইকোর্টের রুলে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীকে বিচার হওয়ার আগেই অর্থ আত্মসাৎকারী ও পাচারকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর বক্তব্যও শোনা হয়নি। তাই রুল ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত ও খারিজযোগ্য, শুনানিতে বলেছি।’

পরে আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ছিল। আজকের আদেশের ফলে হাইকোর্টের এই নির্দেশ থাকছে না। তবে দুদক ও বিএফআইইউ নিজে চাইলে নিজ উদ্যোগে অনুসন্ধান করতে পারবে।’

আদালত আদেশে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের ইস্যু করা সুয়োমটো রুল ডিসচার্জড (খারিজ) করা হলো। যা–ই হোক এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধা হবে না। 

গত বছরের ৪ আগস্ট ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে “এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প” (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। এরপর গত ৬ আগস্ট হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। 

অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। দুদক, বিএফআইইউ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়। 

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম ও তাঁর স্ত্রী গত ২১ আগস্ট লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন, যা গত ২৩ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত বিষয়বস্তুর ওপর সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। একই সঙ্গে লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৮ জানুয়ারি শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে। 

গত বছরের ৪ আগস্ট দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে এস আলমের অর্থ পাচার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে একই বছরের ৬ আগস্ট প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন। ওই সময় প্রতিবেদন দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পরে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে অর্থ পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। 

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বিশাল এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সেই তালিকায় নেই। 

মামলার বিবরণে দেখা যায়, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস ও অন্যান্য যে সম্পদ কিনেছেন সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ থেকে ৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য নেয়া হয়েছে। তবে এই পরিমাণ অর্থ ২০০৯ সালের পর সিঙ্গাপুরে এস আলমের কেবল দুটি হোটেল ও একটি বাণিজ্যিক স্পেস কেনার ৪১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারের দশ ভাগের একভাগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথিতে আরও দেখা যায়, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে সিঙ্গাপুরে ১ লাখ ৭ হাজার ডলার পাঠিয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানও এস আলমের মালিকানাধীন নয়।