গোপালগঞ্জে ১৬ গ্রাহকের টাকা লোপাটে রূপালী ব্যাংক কর্মকর্তা বরখাস্ত, তদন্তে দুদক

Looks like you've blocked notifications!
রূপালী ব্যাংক গোপালগঞ্জ করপোরেট শাখার সিনিয়র অফিসার কৌশিক ভক্ত। ছবি : এনটিভি

রূপালী ব্যাংক গোপালগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে ১৬ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিজের আইডি ব্যবহার করে লেনদেন চালিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই শাখার সিনিয়র অফিসার কৌশিক ভক্ত। ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় ওই কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি এ বিষয়ে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়। পাঁচ মাস ধরে ব্যাংকে ধরনা দিয়েও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী সঞ্জয় বিশ্বাস রেমিটেন্স পাঠাবেন। তাই রূপালী ব্যাংক গোপালগঞ্জ করপোরেট শাখায় ২০২২ সালের ১৩ জুলাই একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোলাবাড়িয়া গ্রামের শীলা রানী বিশ্বাস। শীলার স্বামী সঞ্জয় বিশ্বাস দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট ২৭ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৭ টাকা পাঠান তার স্ত্রী শীলা রানী বিশ্বাসের অ্যাকাউন্টে। কিছুদিন পর শীলা রানীর অ্যাকাউন্ট থেকে ওই শাখার সিনিয়র অফিসার কৌশিক ভক্ত তার নিজের আইডি ও কৌশলে অপর সহকর্মী ওই শাখার নবনিযুক্ত অফিসার মোসা. মুক্তি খাতুনের আইডি ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্টে ফেক লেনদেন করেন এবং প্রায় ১১ লাখ টাকা তুলে নেন। শুধু শীলার অ্যাকাউন্ট থেকেই নয়, একই প্রক্রিয়ায় আরও ১৫ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক কোটি টাকা তুলে নেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক ভক্ত।

ভুক্তভোগী টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাশুড়িয়া গ্রামের কৃষ্ণ পাণ্ডে বলেন, আমি হঠাৎ হার্টের সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পরি। ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। পরে আমার শ্যালক নয়ন বিশ্বাসের সহযোগিতায় তার নিকটাত্মীয় ওই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক ভক্তের কাছে যাই। কৌশিক ভক্তের পরামর্শে ভারতে চিকিৎসায় যাওয়ার জন্য ভিসা করা বাবদ ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলি এবং ব্যাংক স্টেটমেন্টের জন্য অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার টাকা জমা দেই। এরপর আমি ভারতের পরিবর্তে বাংলাদেশে চিকিৎসা করানোর জন্য ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি অ্যাকাউন্ট থেকে ওই ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে ব্যাংকে যাই। তখন ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক ভক্ত সুকৌশলে চেকের পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে অন্যত্র বসিয়ে রেখে ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা উত্তোলন করে কৌশিক নিজে ২ লাখ টাকা গোপনে নিয়ে নেয় এবং আমাকে ১৯ হাজার টাকা প্রদান করে।

ব্যাংকের অফিসার মোসা. মুক্তি খাতুন বলেন, আমি নতুন যোগদান করে ক্যাশের দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন একটি কাজের জন্য আমার সিনিয়র অফিসার কৌশিক ভক্ত কাজ শেখানোর কথা বলে আমার আইডিটি কৌশলে নিয়ে নেন। পরে তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করে, আমার আইডি দিয়ে ব্যাংকে বিভিন্ন ফেক লেনদেন করেন, যা আমি অবগত ছিলাম না। পরে তার দুর্নীতির বিষয়টি বেরিয়ে এলে আমার আইডির বিষয়টি বেরিয়ে আসে।

ভুক্তভোগী শীলা রানী বিশ্বাস বলেন, আমার স্বামী দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিভিন্ন সময়ে আমার অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৭ লাখ টাকা পাঠায়। ওখান থেকে আমি সংসারের প্রয়োজনে কিছু টাকা উত্তোলন করি। কিন্তু বাকি প্রায় ১১ লাখ টাকা ওই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক ভক্ত প্রতারণা করে উত্তোলন করে নেয়। এছাড়াও আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন করে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা, যা আমি আদৌ জানতাম না। গোপালগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন অফিস আমাকে ডাকার পর বিষয়টি আমি জানতে পারি।

গোপালগঞ্জ রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার কৌশিক ভক্ত ফেক লেনদেন করেছেন বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর প্রধান কার্যালয়ের সাথে কথা বলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি। এ ঘটনার পর গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। এই জিডিটি এখন গোপালগঞ্জ দুর্নীতি দমন অফিসে তদন্তাধীন রয়েছে। পাশাপাশি রূপালী ব্যাংকের হেড অফিস থেকে দুই দফা তদন্ত সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে তৃতীয় দফায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে কি পরিমাণ টাকার লেনদেন করেছে, এ বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।

এস এম ওয়াহিদুজ্জামান আরও বলেন, ১৬ জন গ্রাহককে তাদের পাওনা টাকা দ্রুত ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে কৌশিক ভক্ত ৬০ লাখ টাকা আমাদের ব্যাংকে ফেরত দিয়েছেন। কিছুটা বিলম্ব হলেও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কৌশিক ভক্ত মুঠোফোনে জানান, এ বিষয়ে তিনি একা জড়িত নয়। এটা অফিসের ভিতরের ব্যাপার। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছেন। আমি এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না।

দুর্নীতি দমন কমিশনের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সিফাত উদ্দিন বলেছেন, গোপালগঞ্জ সদর থানায় এ বিষয়ে একটি জিডি করেছেন গোপালগঞ্জ রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান। এ জিডির ভিত্তিতে রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার কৌশিক ভক্ত যে টাকা লুটপাট করেছেন এবং অস্বাভাবিক টাকার ফেক লেনদেন করেছেন, এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। আমরা ভুক্তভোগী গ্রাহকসহ ব্যাংকের লোকজনের সাথে কথা বলছি। তদন্ত শেষ হলে কি পরিমাণ টাকার লেনদেন ও লুট পাট হয়েছে, সে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।