ইতালি যাত্রী ছেলের অপেক্ষায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবা
গোপালগঞ্জে পক্ষঘাতগ্রস্ত বাবা ছেলেকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। তিনি এখনও জানেন না ছেলে বেঁচে আছেন না মারা গেছেন। সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে নৌকায় তাঁর ছেলেও ছিলেন।
এ পক্ষঘাতগ্রস্ত বাবা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘শুনেছি ছেলে বেঁচে আছে, আবার কেউ বলছে হাসপাতালে রয়েছে। কেউ আবার বলছে জেলে। আমি শুধু আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। হোক সে জীবিত তা না হয় মৃত। ছেলেকে ফিরে পেলে আমার কোনো দুঃখ নেই।’ তিনি তিউনেশিয়া উপকূলে ট্রলার দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ইমরুল কায়েস আপনের বাবা পানু শেখ।
ইমরুল কায়েস আপনের মা কেয়া কামরুন নাহার ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। কিন্তু অসুস্থ স্বামীকে এটি জানাননি তিনি। কেয়া কামরুন নাহার ছেলের শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।
মৃত আপনের একমাত্র পাঁচ বছরের অবুঝ বোন মিম গণমাধ্যমকর্মীদের জানায়, তার ভাই (আপন) অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে, স্যালাইন দিয়ে রেখেছে। সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরবে আপন এই আশায় রয়েছে সে।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের মাতম।
গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখ ও কেয়া কামরুন নাহার দম্পতির একমাত্র ছেলে ইমরুল কায়েস আপন মেধাবী ছাত্র। মিম নামে পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়েও রয়েছে। বাবা পান্নু শেখ সৌদি আরব থাকায় পাবনায় মামা রেজা শেখের বাড়িতেই জন্ম হয় আপনের। সেখানে স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করেন আপন। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পান আপন। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছিলেন তিনি।
বাবা পান্নু শেখ ২০০৪ সালে সৌদি চলে যান। এখানে ১৫ বছর চাকরি পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তারপর তিনি নরসিংদীর ঘোড়াশালে প্রাণ কোম্পানিতে গাড়ি চালকের চাকরি করতেন। এক বছর আগে তিনি পক্ষাগতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তার কোনো আয় নেই। আর্থিক অনটনের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে আপন বাড়িতে চলে আসেন। এরপর তাদের এক আত্মীয় রহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আপন। বাবাকে অনুরোধ করেন ইটালি পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। মুকসুদপুর উপজেলার গোজনা গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী রহিমকে পান্নু শেখ তাঁর ছেলেকে ইটালি নেওয়ার জন্য গত ৮ জানুয়ারি টেকেরহাট এক্সিম ব্যাংকের শাখায় কথা অনুযায়ী ১১ লাখ টাকা দেন।
পান্নু শেখ বলেন, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর সহ আশপাশের অনেকেই ইতালি যায়। তাদের সঙ্গে ছেলেকে পাঠিয়েছি। তাকে পাঠিয়ে এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি। জীবনের সঞ্চিত সব সম্বল ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। হাঁটতে গেলে আছার খেতে হয়। কিন্তু এমন হবে তা বুঝতে পারিনি। আসলে জীবনে বড়ই ভুল করেছি। এ ভুলের আর শেষ নেই। এখন কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।
পানু শেখ জানান, দুর্ঘটনার দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ছেলে আপনের সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। আপন তাঁকে বলেছিলেন তাঁর জন্য দোয়া করতে। ইতালি পৌঁছে আবার কথা বলবেন। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না তাঁর।
পান্নু শেখের প্রতিবেশী এনামুল মাতুব্বর বলেন, আপন মূলত জন্ম এবং পড়ালেখা করেছে তার মামাবাড়ি পাবনায়। আমাদের এখানে কম সময়ই এসেছে। ভদ্র স্বভাবের ছিল সে।