সাংবিধানিক আদালতকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হতে হবে : বিচারপতি বোরহান উদ্দিন
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেছেন, সাংবিধানিক আদালতকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হতে হবে। আজ মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রায় ১৬ বছরের বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবসে এমন মন্তব্য করেন তিনি। দুপুর ১২টায় আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে বিচারপতি বোরহান উদ্দিনকে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষে এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষে সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির বিদায়ী সংবর্ধনা দেন।
এ সময় বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। তবে বিচার বিভাগের দায়িত্ব সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে অনন্য। কারণ, আইনসভায় প্রণীত কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্য কিনা তা দেখার অধিকার বিচার বিভাগের। পাশাপাশি নির্বাহী বিভাগের কোনো কার্যকলাপ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা তা দেখার ক্ষমতা বিচার বিভাগের। এ কারণেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।
বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘সুশাসন ও আইনের শাসন সমার্থক। সুশাসন তথা আইনের শাসন নিশ্চিত করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। একইসঙ্গে এ কথাও অত্যন্ত ঠিক যে, বিচারিক স্বাধীনতা অনেকাংশে নিশ্চিত করে বিচারকের অন্তরের স্বীকয়তা। স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পালনের জন্য বিচারককে মন ও মননে স্বাধীন হতে হবে। এ কারণে বিচারককে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে।’
বিচারপতি বলেন, ‘আমার এ ছোট দেশটাকে আমি বড় ভালোবাসি। এদেশের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলো আমারই স্বজন। তাদের প্রত্যেকের জীবনে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ আসুক। এদেশের প্রতিটি ছেলে-মেয়ে শিক্ষার আলো পাক। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠুক। জ্ঞান-বিজ্ঞানে আলোকিত মানুষ হোক। এ আমার সারা জীবনের চাওয়া। দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিলে খেটে খাওয়া মানুষ বাঁচার পথ করে নিতে পারে।’
বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ১৯৫৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের ৩ মার্চ অধস্তন আদালত, ১৯৮৮ সালের ১৬ জুন হাইকোর্ট বিভাগ এবং ২০০২ সালের ২৭ নভেম্বর আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর বিচারপতি বোরহান উদ্দিন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হন। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি তাকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।