যে গ্রামে পাইকাররা আসেন হাতে ভাজা মুড়ি কিনতে

Looks like you've blocked notifications!
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরির কাজ চলছে। ছবি : এনটিভি

রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ মুড়ি। বছর দশেক আগেও গ্রামের বাড়ি বাড়ি মুড়ি ভাজা হতো। তবে সময় সাশ্রয় করতে এখন মেশিনে ভাজা হয় মুড়ি। এতে করে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে ভাজা মুড়ি আর তার স্বাদ।

কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের পাশে বরুড়া উপজেলা। এই উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রাম। ছিমছাম সবুজের সমারোহে ঘেরা গ্রামটিতে  প্রবেশ করলেই নাকে লাগে হাতে ভাজা মুড়ির ঘ্রাণ। গ্রামে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি ও বিক্রির কাজ চলছে। ভোরের আলো ফোটার আগে এই গ্রামে দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে হাজির হন। কখনও পাইকারদের ঠিকানা অনুযায়ী হাতে ভাজা মুড়ি বস্তায় করে পাঠিয়েও দেওয়া হয়।

বছরজুড়ে মুড়ি ভাজা ও বিকিকিনি চললেও রমজানে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ মুড়ির কদর গ্রাম-গঞ্জ ও শহরে। বাজারে তাই ব্যাপক চাহিদা। এ কারণে মুড়ি ভাজার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্ষ্মীপুর গ্রামের ৪০টি পরিবারের সদস্যরা।

সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর গ্রামে ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি বাড়িতে গৃহবধূরা তাদের রান্নাঘরে একটি চুলায় চাল ভাজেন। অন্য চুলায় গরম করেন বালু। এরপর একটা পাত্রে গরম বালু ও চাল ঢেলে দেন। এরপর নাড়তে থাকেন। আর তখন চাল ফুটে মুড়ি হয়। পরে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা এ মুড়ি চালনির ওপর রেখে ঘোরাতে থাকেন। তখন বালু নিচে পড়ে যায়। আর মুড়ি থাকে চালনিতে। পরিষ্কার মুড়ি তারা বস্তায় ভরেন। তারপর এসব মুড়ি কুমিল্লার চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মনবাড়িয়া ও ঢাকায়।

লক্ষ্মীপুর গ্রামের দুর্গাচরণ পাল জানান, তাদের গ্রামে অন্তত ৪০টি পরিবার বাণিজ্যিকভাবে হাতে মুড়ি ভাজার কাজে যুক্ত। প্রতিটি পরিবার  গড়ে ২ হাজার ৭০০ কেজি মুড়ি ভাজে। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারের কাছে বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। এতে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা লাভ হয়। বাজারে হাতে ভাজা এক কেজি মুড়ি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। দুর্গাচরণ পাল আরও জানান, বছরের অন্য সময় প্রতিমাসে গড়ে অন্তত ৫ লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি করেন। তবে রমজানে চাহিদা বেড়ে যায়। এ মাসে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি করেন।

লক্ষ্মীপুর গ্রামের শ্রীকৃষ্ণ পাল জানান, দুই ধরনের চাল থেকে মুড়ি ভাজা হয়। এর একটি ‘গিগজ’ চাল। এ চালের মুড়ি লম্বা হয়। তবে বৈশাখ মাসে শুরুতে হবে ‘টাফি’ চালের মুড়ি ভাজা। এ চালের মুড়ি গোল হয় এবং বেশ সুস্বাদু।

তবে দীর্ঘদিন ধরে যারা লক্ষ্মীপুর গ্রামে হাতে ভেজে মুড়ি বিক্রি করছেন তারা এখন খুব একটা মুনাফা করতে পারেন না। জ্বালানি খরচ বৃদ্ধিসহ মুড়ি বাজারজাতকরণে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুএমং মারমা বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর গ্রামে বংশ পরম্পরায় চলছে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি ও বিক্রির কাজ। তাদের মুড়ি স্বাদে ও মানে অনন্য।  শুনেছি তাদের এই শিল্পটি ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। আমি চেষ্টা করব এ শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে যা করা যায় তা করতে।’