ডিএনএ টেস্ট মিলেছে বাবার পরিচয়, সন্তানকে অর্ধেক সম্পত্তি দিতে নির্দেশ

Looks like you've blocked notifications!
হাইকোর্ট। ফাইল ছবি

রংপুরের মিঠাপুকুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় ডিএনএ টেস্ট পরিচয় পেয়ে সন্তানের নামে অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার শর্তে এক বাবাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার (২০ মার্চ) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহুরুল হকের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। আগামী ২১ মে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে আদালতে জানাতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সুলতানা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার সন্তান স্বীকৃতি পেয়েছে এ জন্য আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এত বছর আমার সন্তান তার নানার তত্ত্বাবধানে ছিল। একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। তার বয়স এখন ১৫ বছর। 

আইনজীবীরা জানান, আপন চাচাত ভাই আসাদুল ইসলামের সাথে প্রেমের সম্পর্কের জেরে গর্ভবতী হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় চাচাত ভাই আসাদুল ইসলাম। পরে এ ঘটনায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়। ইতোমধ্যে ছেলে সন্তান প্রসব করেন ওই নারী। সালিশ বৈঠক করেও সমাধান না হওয়ায় মামলা করেন সুলতানা বেগম। এর মাঝে কেটে গেছে অনেক বছর। সুলতানার একটি ছেলে সন্তান হয় যার বয়স এখন ১৫ বছর। ছেলের ভরণপোষণ ও পিতৃত্বের পরিচয় নিয়ে নামতে হয় আইনি লড়াইয়ে। ডিএনএ টেস্ট প্রমাণিত হয় সন্তানের বাবা-মা সুলতানা ও আসাদুল ইসলাম। 

মামলার বিবরণে জানা যায়, এ ঘটনায় ২০২২ সালের ২৬ জুন রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় এলাকায় এক গৃহবধূকে রিকশা থেকে নামিয়ে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তিন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। বিকেলে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিরুদ্ধে আসামি আপিল দায়ের করে। আপিল চলাকলীন জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নিতে শর্ত দিয়ে সন্তান অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার নির্দশে দেয়। 

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২৬ মে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রিকশাযোগে রংপুরের লালবাগ মোড় হয়ে নগরীর মডার্ন মোড় যাচ্ছিলেন ওই গৃহবধূ (২৪)। এ সময় তিন আসামি ওই রিকশার গতিরোধ করে তাকে টেনে-হিঁচড়ে রিকশা থেকে নামায়। পরে নগরীর খামার এলাকার পূর্ব দিকে গাছের নিচে খুপড়ি ঘরে ওই গৃহবধূকে নিয়ে গিয়ে তিন ধর্ষক মিলে ধর্ষণ করে। ওই নারীর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে আসামি আসাদুলকে আটক করে। এ সময় অন্যান্য আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী মাহিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দিলে পুলিশ এসে আসামি আসাদুলকে নিয়ে যায়।  ঘটনার দিন ওই নারী নিজেই বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। পুলিশ ধর্ষিতা গৃহবধূর মেডিক্যাল পরীক্ষা রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে করান। পরে ফরেনসিক বিভাগ গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রদান করে।

তদন্ত শেষে প্রধান আসামি আসাদুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মামলাটি বিচার চলাকালীন ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামি বাবু, আসাদুল ও রঞ্জু মিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে রায় প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন সময় থেকেই আসামি বাবু পলাতক ছিল। রায় ঘোষণার সময় আসামি আসাদুল ও রঞ্জু মিয়া আদালতে উপস্থিত ছিল। বিচারক পলাতক আসামি বাবুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন এবং গ্রেপ্তার হওয়ার দিন থেকে রায় কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন।