ঈদে ছুটি মিলছে কতদিন, ঢাকা ছাড়তে পারবেন কতজন?
এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে যোগ হচ্ছে বাংলা নববর্ষের ছুটি৷ এর সঙ্গে সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে লম্বা ছুটির মধ্যে পড়ছে বাংলাদেশ৷ তাই অন্যবারের তুলনায় এবার বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু ঈদে গ্রামের বাড়িই নয়, অনেকে বিনোদনের জন্যও ঢাকা ছাড়বেন। দেশের বাইরেও যাবেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশে ১২ মার্চ রোজা শুরু হয়েছে। ঈদের সরকারি ছুটি নির্ধারণ করা আছে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল৷ ২৯ রোজা হলে ১০ এপ্রিল হবে ঈদ৷ তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঈদের আগেই ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি করবে, যার প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে৷
ঈদে যারা বাড়ি যাবেন তাদের কথা চিন্তুা করে ছুটির সময় বাড়তে পারে বলে জানা গেছে৷ কারণ রোজা ২৯টি হলে ওই দিন বাড়ি রওনা হয়ে পরের দিন ঈদ করা কষ্টের৷ আবার ১২ এপ্রিল শুক্রবার এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটি৷ সরকার তা বিবেচনা করলে ৯ এপ্রিল থেকে ছুটি শুরুর সম্ভাবনা আছে৷ বিভিন্ন পর্যায় থেকেও এমন দাবি আছে। তবে এর বাইরেও নানা হিসাবে ঈদে এবার লম্বা ছুটি পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা৷ ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে বলতে গেলে টানা ১০ দিন ছুটি পাবেন তারা৷
ঈদের আগে শবে কদর আর পরে পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে ৫ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল এই ১০ দিনের মধ্যে অফিস খোলা থাকবে মাত্র ৮ এপ্রিল৷ ৫ ও ৬ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি৷ ৭ এপ্রিল শবে কদর সরকারি ছুটি৷ ৮ এপ্রিল একদিন অফিস খোলা৷ একদিন বাড়লে ৯ থেকে ১২ এপ্রিল চার দিন ঈদের ছুটি৷ আবার ১২ ও ১৩ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি৷ ১৪ এপ্রিল রোববার বাংলা নববর্ষের সরকারি ছুটি৷
ঢাকার অনেকেই বিশেষ করে যারা সরকারি চাকরি করেন, তাদের মধ্যে এবার তাই ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যাওয়ার আগ্রহ বেশি৷ সবাই যে গ্রামের বাড়িতে যাবেন তা নয়৷ কেউ কেউ সপরিবারে ঘুরতেও যাবেন৷ সরকারি চাকরিজীবী শাহ আলম বলেন, ‘এবার ইচ্ছা আছে ঈদটা উপভোগ করার৷ গ্রামের বাড়ি যাওয়া ছাড়াও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রাঙামাটি যাওয়ার ইচ্ছ আছে৷’
পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে অগ্রিম বুকিং
ঈদে কক্সবাজার, রাঙামাটি, সাজেক, কুয়াকাটসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এবার ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ সাজেকের রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জেরি লুসাই বলেন, ‘ঈদের তিন দিন এবং পরের দুদিন বুকিং বেশি৷ রিসোর্ট ও কটেজের প্রায় ৮০ ভাগ ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে৷ গত ঈদের চেয়ে এবার বুকিং বেশি৷ কারণ ছুটি বেশি৷ আমরাও বেশি গেস্ট আশা করছি৷ শেষ পর্যন্ত আগ্রহী সবাইকে আমরা হয়তো সিট দিতে পারব না৷’
জেরি লুসাই আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২০টি রিসোর্ট ও কটেজ আছে৷ মোট তিন হাজারের মতো গেস্টকে আমরা আবাসন সুবিধা দিতে পারি৷’
কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘আমরা এবার বেশি গেস্ট আশা করছি৷ ইতোমধ্যে আগাম বুকিং শুরু হয়ে গেছে। অনেকে অপেক্ষা করছেন ঈদের ছুটি বাড়ে কিনা৷ ঈদের দিনেই আমাদের বুকিংয়ের চাপ বেশি৷ ঈদের পরেও চাপ আছে৷ আর দুই-একদিন পর কতটা চাপ হয় তা বোঝা যাবে৷’
আবুল কাসেম বলেন, ‘কক্সবাজারে একশর বেশি হোটেল আছে৷ সবমিলিয়ে পাঁচ হাজারের মতো কক্ষ আছে৷’
রাঙামাটি পর্যটন মোটেলের নাঈমুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের তিন দিনের জন্য আমাদের এখনও কিছু রুম খালি আছে৷ কিন্তু ঈদের পরের তিন দিনের বুকিং প্রায় শেষ৷ মাত্র কয়েকটি রুম বাকি আছে৷’
ঢাকার আশপাশের রিসোর্টগুলোতেও এই ছুটিতে অনেকেই যাচ্ছেন৷ গাজীপুরের বেশ কয়েকটি রিসোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঈদের পরে দুইদিন বিশেষ করে ১৩ ও ১৪ তারিখে চাপ বেশি৷ সারা রিসোর্টের এমদাদ হোসেন বলেন, ‘ঈদের পরের তিন দিন দিনের ৮০ ভাগ রুম ও কটেজই ভাড়া হয়ে গেছে।’
২৪ মার্চ থেকে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে৷ এবার ঈদে অতিরিক্ত আট জোড়া ট্রেন দেওয়া হয়েছে৷ বাসেও দেওয়া হচ্ছে অগ্রিম টিকিট৷
আকাশপথেও চাপ আছে৷ ইউএস বাংলার ম্যানেজার কামরুল ইসলাম জানান, তাদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ঈদের দিন ও ঈদের পরের তিন দিন চাপ বেশি৷ প্রায় সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে৷ তবে ঈদের আগেও এবার চাপ বেশি৷ লম্বা ছুটির কারণে অনেকেই ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন কক্সবাজারের সব ফ্লাইটের বুকিংই শেষ।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার ঈদে দেশের বাইরে যাওয়ার সংখ্যাও কম না৷ এর মধ্যে বড় অংশটি যাচ্ছে কলকাতা ও থাইল্যান্ড৷
ঈদে কত মানুষ ঢাকা ছাড়বেন?
গত ঈদে মেবাইল ফোনের সিমের হিসাবে ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩২ জন মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন৷ তবে এটি প্রকৃত হিসাব নয়৷ কারণ সিমপ্রতি একজন হিসাব করা হয়েছে৷ আবার শিশুসহ যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না তারা এই হিসাবের মধ্যে নাই৷ নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘’নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমাদের ধারণা ঈদে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ মানুষ ঢাকার বাইরে চলে যান৷ আর এবার ছুটি লম্বা হওয়ায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে হয়৷’
সর্বশেষ জনশুমারিতে ঢাকার জনসংখ্যা বলা হয়েছে এক কোটি দুই লাখ ৭৮ হাজার৷ তবে ২০২৩ সালের জুনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সংসদে ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটি ১০ লাখ বলে উল্লেখ করেন৷ আর নগর বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটির বেশি৷
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বিবেচনায় এবার ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঢাকার বাইরে যাবেন৷ এর মধ্যে রাজধানী থেকেই ঢাকা ছাড়বেন এক কোটি মানুষ৷ এবার লম্বা ছুটি এবং সঙ্গে বাংলা নববর্ষ থাকায় মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষও ঢাকার বাইরে যাবেন৷ গত বছর ঈদে আমাদের হিসাবে রাজধানী এবং আশপাশে এলাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে।’
আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকা শহরে যারা থাকেন, তাদের ৭৫ থেকে ৮০ ভাগের মূল গ্রামে৷ আর যারা এখানে আছেন তাদের ৮০ ভাগের এই শহরে কোনো নিজস্ব বাড়ি ঘর নেই৷ ফলে প্রাণের টানে, নাড়ির টানে মানুষ একটু বড় ছুটি পেলেই গ্রামে চলে যায়৷ সেখানে তারা স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হয়৷’