২৫০ শয্যার হাসপাতালে লিফট বন্ধ দুই মাস

প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ঝিনাইদহে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি  

Looks like you've blocked notifications!
শিশু সন্তান কোলে নিয়ে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে এসেছেন আছমা ও তার মেয়ে অন্তরা। ছবি : এনটিভি

ঝিনাইদহ জেলা শহরের আরাপপুরের বহুল আলোচিত বেসরকারি রাবেয়া হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রশীদকে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার (৩১ মার্চ) সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ তিন সদস্যর এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। রাতে এ খবর নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মেহেদী হাসান। গত ২৮ মার্চ এনটিভি অনলাইনে এ সংক্রান্ত (প্রসূতির মৃত্যু) খবর প্রচারের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

২৫ মার্চ সকালে জেলা শহরের আরাপপুরের বহুল আলোচিত রাবেয়া হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে শৈলকুপা উপজেলার মীর্জাপুর গ্রামের আল-আমিনের স্ত্রী শারমিন খাতুনের (২৩) সিজার (অপারেশন) করা হয়। দ্বিতীয় সন্তানের মা হন তিনি। কিন্তু সিজার করার পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। একই দিন দ্বিতীয়বার অপারেশন করে জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয়। তাতে জ্ঞান ফেরে না শারমিনের। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ভোরে যশোরের ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। এরপর শারমিনের মরদেহ জিম্মি করে আইসিইউ বিল পরিশোধের শর্তে ক্লিনিক মালিক শাসকদলের লোকজন দিয়ে দুই লাখ টাকায় ঘটনাটি দফারফা করে। সরকারি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার রেজা সেকেন্দার শারমিনের সিজার করেন। তোলপাড় সৃষ্টি হলে এ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এনটিভি অনলাইনে ২৮ মার্চ খবরটি প্রচার করা হয়। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগের টনক নড়েছে। ঘটনার চার দিনের মাথায় গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।

উল্লেখ্য, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে নিত্যদিন মরছে প্রসূতি মা। শহর গ্রাম সর্বত্র মাতৃহারা শিশু, সন্তান হারা মায়ের আর্তনাদ। স্বজন হারাদের আহাকারে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গঠন করা হচ্ছে একের পর এক তদন্ত কমিটি। জড়িতদের বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে আইনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।

অপরদিকে, সরকারি আটতলাবিশিষ্ট ২৫০ শয্যার ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের লিফট মাসের পর মাস বন্ধ। চরম দুর্ভোগে মুমূর্ষু রোগীরা। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ সেবাপ্রার্থীরা। ওয়ার্ডে কাঁধে করে রোগী নিতে হচ্ছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (পেশনে) ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে পাল্টা অভিযোগের সুরে বলেন, হাসপাতালের আটতলা ভবন নির্মাণের সময় নিম্নমানের লিফট লাগানো হয়েছে। এখন নবমতলা বর্ধিত করণের কাজ চলছে। দুইমাস লিফট বন্ধ রয়েছে। আরও অন্তত এক মাস লিফট বন্ধ থাকবে। এতে করে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে সিভিল সার্জনের দপ্তরে বন্ধ ঘোষিত নাইট অ্যাঙ্গেল মেডিকেল কলেজ আশুলিয়া ঢাকা থেকে পাস করা ডা. ফয়জুন নেসার (রুনু) বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের উত্তর দিকে দেওয়াল ঘেঁষে গড়ে ওঠা ২০১৯ সালে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়া আল-আমিন প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে ভুল অপারেশন (সিজারিয়ান) করেন ওই ডাক্তার (ফয়জুন নেসার (রুনু)। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেন জেলা শহরের ব্যাপারি পাড়াতে বসবাস করা হতদরিদ্র বিধবা মোছা. আছমা খাতুন। এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি অন্তরা। শিশু সন্তান কোলে নিয়ে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে এসেছিলেন আছমা ও তার মেয়ে অন্তরা। ভুল চিকিৎসার সাথে জড়িত ডাক্তারসহ ক্লিনিক মালিকের বিচার দাবি করেন তারা। এ সময় ওই ডাক্তার ফয়জুন নেসার (রুনু) স্বামী কথিত ডাক্তার তনু (ডাক নাম) তদন্ত কার্যক্রম ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন অন্তরার মা আছমা খাতুন।

এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার (অপারেশন) করার সময় জরায়ু কেটে ফেলা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তৈলটুপি গ্রামের এনামুল কবীরের স্ত্রী প্রসূতি লাভলী বেগমের মৃত্যু হয়। একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন এই মা। শনিবার (৩০ মার্চ) এ ঘটনা ঘটে। রেক্সোনা পরভীন ইলোরা নামের এক ডাক্তার সিজার করেন। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ক্লিনিকটির অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে দেন এবং ক্লিনিক মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এভাবে প্রতিনিয়তই (ভুল অপারেশন) মৃত্যুর মিছিল লম্বা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ঝিনাইদহের স্বাস্থ্যসেবা খাত নিয়ন্ত্রণ করে আসছে একাধিক শক্তিশালী চক্র। অনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা সিংহভাগ অবৈধ ক্লিনিক বা বেসরকারি হাসপাতালে নেই ডাক্তার-নার্স। অপারেশন নির্ভর এ সব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রসূতি মারে মৃত্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. শ্রভ্রা রানী দেবনাথ অবশ্য দাবি করে বলেছেন, এখন পর্যন্ত আটটি ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।