ভিজিএফের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভিজিএফের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার মিঠাপুর ও মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে চাল বিতরণে এ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়।
দরিদ্র অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য ১০ কেজি করে চাল বিতরণের কথা থাকলেও তাদের মধ্যে সাড়ে আট কেজি থেকে আট কেজি ৮০০ গ্রাম করে চাল বিতরণ করা হয়েছে এবং ৪নং মিঠাপুরে চাল কম দিয়ে আট বস্তা চাল এতিমদের জন্য রেখেছেন চেয়ারম্যান।
চালের ওজন মাপার জন্য ডিজিটাল স্কেল মেশিন ব্যবহার করা হয়নি। একটি বালতিতে করে মনগড়াভাবে চাল বিতরণ করা হয় এবং একই ব্যক্তিকে বারবার চাল নিতেও দেখা গেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দরিদ্র অসহায় ও দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ১০ কেজি করে চাল সারা দেশের ন্যায় নওগাঁর বদলগাছীতে বিতরণ করা হয়। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার ৪নং মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদ এবং ২নং মথরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যেক উপকারভোগীকে ১০ কেজি চালের বদলে ৮ কেজি ৫০০ থেকে আট কেজি ৮০০ গ্রাম চাল বিতরণ করা হয়।
চাল বিতরণের সময় ২নং মথরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা, ৪নং মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনসহ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মথরাপুর ইউনিয়নে সকাল সাড়ে ১১টায় ট্যাগ অফিসার উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা সন্ধ্যা রানীকে পাওয়া যায়নি। মিঠাপুর ইউনিয়নে দুপুরে ট্যাগ অফিসার প্রেম কুমারকে পাওয়া যায়নি।
উপকারভোগীরা বলেন, আমরা ৮ কেজি ৪০০, ৮ কেজি ৫০০ এবং ৮ কেজি ৮০০ গ্রাম চাল পেয়েছি। অনেক উপকারভোগী বলেন, চাল কম দেওয়ার কথা বললে চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হন। আমরা গরিব অসহায় মানুষ, আমাদের করার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতে এই ভিজিএফ চাল প্রকৃত গরিব অসহায় ও দুঃস্থদের দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁর নির্দেশনা অমান্য করে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা প্রকৃত গরিব অসহায় ও দুস্থদের কার্ড না দিয়ে চাল ব্যবসায়ীদের কার্ড দিয়েছে। আর সেই কার্ড দিয়ে চাল ব্যবসায়ীরা এলাকার ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষদের দিয়ে একাধিকবার চাল তুলছেন। এতে প্রকৃত গরিব অসহায় ও দুঃস্থরা সরকারি ভিজিএফের চাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মথরাপুর ইউনিয়নের আরজি দাউদপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন বলেন, আমার মায়ের কার্ডের চাল নিতে এসেছি। মেপে দেখি ৮ কেজি ৪০০ গ্রাম।
মিঠাপুর ইউনিয়নেরর মামুনুর রহমান জানান, ১০ কেজি চাল নিয়ে গিয়ে মেপে দেখি ১০ কেজি নেই ৮ কেজি ৬০০ গ্রাম আছে।
হিসাব করে দেখা যায়, ২নং মথরাপুর ইউনিয়ন পরিষদে দুই হাজার ৪৭ জন অসহায় দুস্থ মানুষের মধ্যে ২০ হাজার ৪৭০ কেজি চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও বিতরণ করেন ১৭ হাজার ৩৯৯ কেজি চাল।
৪নং মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদে দুই হাজার ১২২ অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে ২১ হাজার ২২০ কেজি চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও বিতরণ করেন ১৮ হাজার ৬৭৩ কেজি চাল।
ঈদের আগে অসহায় দুস্থদের ভিজিএফের চাল ২নং মথরাপুর ইউনিয়ন থেকে তিন হাজার ৭১ কেজি এবং ৪নং মিঠাপুর ইউনিয়ন থেকে দুই হাজার ৫৪৭ কেজি কম দেওয়া হয়েছে। দুটি ইউনিয়ন থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ৬১৮ কেজি চাল উধাও হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মথরাপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা সন্ধ্যা রানী বলেন, আমরা কয়েকটি বস্তা মেপে দেখি কোনটায় ৩০ কেজি কোনটায় ২৯ কেজি চাল আছে। সব বস্তা সমন্বয় করে গড়ে ৯ কেজি সামথিং চাল প্রতিজনে ভাগে পেয়েছি। আমরা ৯ কেজি করে দিয়েছি। এখান থেকে বালতি দিয়ে মেপে চাল দেওয়া হয়েছে।
উপকার ভোগীদের চাল কম দেওয়া হচ্ছে এবং একই ব্যক্তি একাধিকবার চাল তুলছেন এ ব্যপারে জানতে চাইলে ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী ইনস্টাক্টার প্রেম কুমার বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় অন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। এ ব্যপারে চেয়ারম্যান সাহেব ভালো বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে জানতে মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি বলেন, এত মানুষকে ডিজিটাল মেশিনে মেপে চাল দেওয়া সম্ভব না; তাই বালতি দিতে মেপে চাল দেওয়া হয়েছে। বালতির মাপে এক আধটু অনিয়ম হতে পারে। তবে সঠিকভাবে চাল বিতরণ করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জানতে মথরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানার মুঠোফোন যোগাযোগ করলে তা ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অ.দা.) মো. কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিব। কোনো উপকারভোগীর হক যেন চাল কম না পায় সে বিষয়ে আমাদের নজর আছে।