সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর

Looks like you've blocked notifications!
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় শেষে কোলাকুলি করেন সব বয়সী মানুষ। ছবি : ফোকাস বাংলা

সারা দেশে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ ঘিরে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসা। সাধ ও সাধ্যানুযায়ী ঘরে ঘরে রান্না হয়েছে সুজি, সেমাই, পোলাও, কোরমা, পায়েস, পিঠাপুলিসহ নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার।

আজ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের প্রধান জামাতগুলো। এতে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন উৎসবমুখর পরিবেশে। নামাজ শেষে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মুসল্লিরা।

জাতীয় ঈদগাহে গাজাবাসীসহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় বি‌শেষ দোয়া

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন সব বয়সী মানুষ। ছবি : ফোকাস বাংলা

রাজধানীতে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাসহ মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত শুরু হয়। সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটের দিকে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঈদের জামাত।

প্রধান ঈদ জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি রুহুল আমীন। মোকাব্বির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুয়াজ্জিন ক্বারি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে ইমাম বিশেষ খুতবা দেন। এরপর সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির মু‌ক্তিসহ কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষভাবে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয়। নামাজ ও মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সাধারণ মুসল্লিরা জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

বায়তুল মোকাররমে ঈদের পাঁচ জামাত অনুষ্ঠিত

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে মোনাজাতে অংশ নেন মুসল্লিরা। ফোকাস বাংলা

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে মানুষের কল্যাণ ও দেশের সমৃদ্ধ কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়েছে।

 আজ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৭টায় বায়তুল মোকাররমে শুরু হয় ঈদের প্রথম জামাত। নামাজ শেষে ৭টা ২২ মিনিটের দিকে শুরু হওয়া ১২ মিনিটব্যাপী চলা মোনাজাতে আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দোয়া করেন ছোট-বড় সব বয়সী মুসল্লিরা। এ মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান।

মোনাজাতে দেশবাসীর কল্যাণ ও সুস্থতা কামনা করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া কামনা করা হয়। এ সময় মোনাজাতে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি, মৃতের আত্মার মাগফিরাত, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ইমাম সাহেব। প্রথম জামাতের ইমাম ছিলেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির হিসেবে ছিলেন জাতীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।

এর আগে আজ ফজরের নামাজের পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে জায়নামাজ হাতে জাতীয় মসজিদে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। ঈদের নামাজ আদায় শেষে দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা কোলাকুলির পাশাপাশি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়, এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় শেষ ঈদ জামাত। 

শোলাকিয়ায় ঈদের ১৯৭তম জামাত অনুষ্ঠিত

শোলাকিয়ায় বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা

দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ১০টায় শোলাকিয়ায় ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন শহরের বড় বাজার মসজিদে ইমাম মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এবারও দেশ-বিদেশের চার লাখেরও বেশি মুসল্লি এ ময়দানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন।

গতকাল বুধবার থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ মুসল্লির ঢল নামে শোলাকিয়া ময়দানে। সকাল সাড়ে ৮টার আগেই মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। সকাল ১০টায় নামাজ শুরু হলে শোলাকিয়া মাঠে উপচে পড়া ভিড়ের কারণে আশপাশের রাস্তা-ঘাট, বাসাবাড়ির ছাদ, নরসুন্দা নদীর পারে মুসল্লিরা নামাজের কাতার করে দাঁড়িয়ে যান।

ঈদগাহ ময়দানের রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে পরপর তিনবার শটগানের গুলি ছুড়ে মুসল্লিদের নামাজে দাঁড়ানোর সংকেত দেওয়া হয়।

শোলাকিয়ায় নামাজ আদায়ে গত দুই দিন ধরেই গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোরসহ ৬৪টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিশোরগঞ্জে লোক আসতে শুরু করে। অনেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাসায়, আবাসিক হোটেল, শহরের মসজিদগুলোতে এবং ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে রাতযাপন করেন। ভোরে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও হেঁটে হাজারো মানুষ কিশোরগঞ্জে আসেন। সবার গন্তব্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া। নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।

দিনাজপুরে লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে বিশাল ঈদ জামাত

দিনাজপুরে ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে বৃহস্পতিবার সকালে দেশের অন্যতম বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি : এনটিভি

দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে দেশের অন্যতম বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৯টায় প্রায় সাত লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের এ জামাত শুরু হয়। ঈদের ঐতিহাসিক এ জামাতে অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের কয়েকটি জেলার মুসল্লিরা আসেন।

এই ঈদ জামাতে অংশ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হুইপ ইকবালুর রহিম ও বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) তৌয়বুল আলম দুলাল, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সর্বস্তরের জনগণ।

রংপুর জেলা থেকে ঈদের জামাতে অংশ নইতে আসা অলিউল ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় ও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করার অন্য অনেকদিনে ইচ্ছে ছিল। আল্লাহ আজ সে আশা পূরণ করেছে। জীবনে প্রথম লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে পেরে ভালো লাগছে।’

জেলার খানসামা উপজেলা থেকে নামাজ পড়তে আসা ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘আমি এর আগেও ঐতিহ্যবাহী এই ময়দানে নামাজ পড়েছি। সবাই মিলে একসঙ্গে লাখ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করলাম। সবাই মিলে নামাজ পড়ে বেশ ভালো লাগল।’

এদিকে বৃহৎ এ জামাতকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ছিল কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি। মাঠের আশপাশে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও তৎপর ছিলেন।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার সংবাদ দিয়েছেন এনটিভির প্রতিনিধিরা। আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই দেশব্যাপী বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে বলে জানান তারা।