কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে শুরু বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা

Looks like you've blocked notifications!
রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের জলে আজ শুক্রবার ফুল ভাসিয়ে শুরু বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা। ছবি : এনটিভি

পাহাড়ে বর্ষবরণ ও বিদায়ের উৎসব ‘বৈসাবি’ ঘিরে নানান সাংষ্কৃতিক আয়োজনের পর এবার শুরু হয়েছে উৎসবের মূল আয়োজন। আজ শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে শহরের তিনদিক ঘেরা কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন স্থানে চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, তংচঙ্গ্যাসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির গঙ্গাদেবী ও জলবুদ্ধর উদ্দেশে নিবেদন করে প্রার্থনা। পুজোর ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের প্রধান তিন দিনের আয়োজনের প্রথম দিন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে ব্যস্ত এখন শহর, নগর আর পাহাড়ি গ্রামগুলো। সকালে কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসিয়ে নতুন বছরের জন্য শুভকামনা জানিয়ে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়। শুক্রবার চাকমা জনগোষ্ঠীর ‘ফুল বিজু’, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর  ‘হাঁড়িবৈসু’ আর মারমা সম্প্রদায়ে সূচিকাজ। ঠিক ফুলবিজু নামে অভিহিত না হলেও এইদিন প্রায় সব পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীই জলে ফুল ভাসানোর আনুষ্ঠানিকতা পালন করে।

ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুলবিজু উপলক্ষে শহরের রাজবনবিহার ঘাট, গর্জনতলী মধ্যদ্বীপ, কেরাণী পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান উদযাপন কমিটি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে জলে ফুল ভাসানো হয়। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু এভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদাভাবে পালন করে এই উৎসব।

উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে এবং কলাপাতা করে পবিত্র এই ফুল ভাসিয়ে দেয় পানিতে, তাই একে বলা হয় ফুল বিজু। পানিতে ফুল ভাসিয়ে নিজ পরিবার এবং দেশ তথা সমগ্র জীবের মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়। জলে ফুল ভাসিয়ে পুরোনো বছরের দুঃখ বেদনাই যেন ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বালান পাহাড়ের বাসিন্দারা।

ফুল ভাসিয়ে আর্যকুমার চাকমা বলেন, ‘সবাই ফুল ভাসানো বললেও মূলত আমাদের জন্য এটি ফুল নিবেদন। আমরা জলের প্রতি কৃতজ্ঞতার অংশ হিসেবে গঙ্গাদেবী ও জলবুদ্ধর কাছে ফুল নিবেদন করি। পাশাপাশি প্রার্থনা করি যাতে সারা বছর আমাদের ভালো কাটে। আমাদের পরিবারের সবাই ভালো থাকে।’

সুনেত্রা চাকমা বলেন, ‘ফুল বিজুর দিনে ফুল নিবেদন থেকেই বর্ষবরণের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আগামীকাল মূল বিজু এবং পরশু পহেলা বৈশাখ পালন করব। ফুল ভাসিয়ে আমরা গঙ্গাদেবীর কাছে সুখ ও সমৃদ্ধি প্রার্থনা করি।’

বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসরত সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য আজকের দিনটি বিশেষ একটি দিন। কারণ আজকের দিন থেকেই নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।’

রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির ভিন্ন ভিন্ন নামে আয়োজিত এই উৎসবকে সমন্বিতভাবে বৈসাবি নামেই অভিহিত করার মধ্য দিয়ে সম্প্রীতির যে বার্তা এবং সব জনগোষ্ঠীর একইসূত্রে গাঁথা, সেটাই প্রমাণ করে। এই আয়োজন পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে আরও ঋদ্ধ করে।’