গানের সুর ও কবিতায় রমনায় বর্ষবরণ, মানুষের ঢল

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে গান-কবিতা পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। ছবি : এনটিভি

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে ১৪৩১ সনের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হচ্ছে। আজ শনিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের আয়োজনে বর্ষবরণের অন্যতম অনুষ্ঠান শুরু হয়। গানের সুর ও কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে।

বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠান জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ গান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়। ভোর থেকেই এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ বছরের প্রত্যাশা নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১কে স্বাগত জানান তারা।

এদিকে, প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ঐতিহ্যগতভাবে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জাতীয় দিবসটিতে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

এ ছাড়া বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে আজ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হবে।

মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে। পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এ সময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পয়লা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।