রাজধানীতে শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ২
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে আর্ন্তজাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির চক্রের বাংলাদেশের মূলহোতা এবং তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গতকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের এন্টি ইললিগ্যাল আর্মস রিকোভারি টিম।
আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—টি আই এম ফখরুজ্জামান ওরুফে টিপু কিবরিয়া এবং তার সহযোগী মো. কামরুল ইসলাম ওরফে সাগর। তাদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে তোলা ২৫ হাজার স্থির চিত্র ও প্রায় এক হাজার ভিডিও কনটেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে এক হাজার শিশুর ২৫ হাজারের বেশি পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট ও পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ছাড়া একজন শিশু ভুক্তভোগীকেও উদ্ধার করে পুলিশ।
সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার ফকরুজ্জামান এক সময়কার খুব জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক। তিনি টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত। টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৮৮ সালে স্মাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে সেবা প্রকাশনীর মাসিক কিশোর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনা করতেন। তার অর্ধশতাধিকের ওপরে বই রয়েছে, যার বেশিরভাগই সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।
মো. আসাদুজ্জামান আরও জানান, ২০০৫ সাল থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণে জড়ান টিপু কিবরিয়া। দীর্ঘদিন এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার পর ২০১৪ সালে সিআইডির কাছে গ্রেপ্তার হন এবং তার নামে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়। ২০২১ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন টিপু কিবরিয়া। ‘একশো এক’ নামে একটি কবিতার বই প্রকাশ করেন তিনি। একপর্যায়ে সাহিত্য চর্চার আড়ালে তিনি পুনরায় শিশু পর্নোগ্রাফির সেই পুরনো পথেই হাঁটতে শুরু করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘টিপু কিবরিয়া ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট বানান। তিনি নিজে গুলিস্তান, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাংবাদিক বেশে ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের সামান্য কিছু অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজের বাসায় ডেকে এনে তার নিজের ক্যামেরার সাহায্যে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির নগ্ন ছবি, শরীরের বিভিন্ন গোপনাঙ্গের ছবি তোলেন এবং ভিডিও করেন। নিজের বাসা ছাড়াও বিভিন্ন পার্কের নির্জন ঝোপ-ঝাড়ে এই ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের একই প্রক্রিয়ায় অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন তিনি। এই ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের সংগ্রহ করার জন্য তার কয়েকজন সহযোগীও রয়েছে, যাদের মধ্যে একজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো থেকে প্রায় ২০ জন পথশিশুর ছবি ভুক্তভোগী হিসেবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরবর্তীতে এই অশ্লীল ছবিগুলো বিভিন্ন নিষিদ্ধ ও পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড করতেন টিপু কিবরিয়া। অভিযানে তার ব্যবহৃত ডেস্কটপ কম্পিউটার পরীক্ষা করে দেখা যায় দুটি অ্যাপসের মাধ্যমে তিনি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এ পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও জর্মানির নাগরিকসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের আইডি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তারা এসব আইডি দিয়ে মূল হোতা টিপু কিবরিয়ার সঙ্গে শিশু পর্নোগ্রাফির বিভিন্ন কনটেন্টের জন্য যোগাযোগ করতেন। আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।