নড়াইলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন হন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান : র্যাব
নড়াইলের লোহাগড়ায় মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত শুটারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর নেপথ্যের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। মূলত সাবেক ইউপি সদস্য আকবর হোসেন লিপনের সঙ্গে বিরোধ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যার ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষ ভাড়ায় শুটার এনে গুলি করে কামালকে হত্যা করে। তবে এই ঘটনায় অভিযুক্তকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি র্যাব।
আজ শুক্রবার (১৭ মে) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
গ্রেপ্তার চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র্যাব জানায়, গত ১০ মে হত্যার শিকার হন চেয়ারম্যান কামাল। ঘটনার সাত দিন পর চারজনকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে খুনের রহস্য।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন—শুটার সাজেদুল মল্লিক (২৫), পাভেল শেখ (২৮), মামুন মোল্যা (২৬) ও রহমত উল্লাহ শেখ (১৯)। এর মধ্যে দুজন ছাত্র, একজন চালক, আরেকজন শ্রমিক। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও নড়াইল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১০ মে মোস্তফা কামালকে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত হামলা ও এলোপাথারি গুলি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার সময় রাস্তায় মারা যান। এই হত্যার ঘটনায় মোস্তফা কামালের বড়ভাই বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, মল্লিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আকবর হোসেন লিপনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে শত্রুতা ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বিরোধের জের ধরে মোস্তফা কামাল এবং আকবর হোসেন লিপনের অনুসারীদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে লিপন গুরুতর আহত হন এবং তার একটি হাত কাটা পড়ে। পরে লিপন ও তার অনুসারীরা মোস্তফা কামালের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। সে কারণেই এ হত্যাকাণ্ড।
কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, লিপনের নির্দেশনায় ঘটনার দিন সকালে তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে গ্রেপ্তার হওয়া সাজেদুলসহ অন্যরা মোস্তফা কামালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোস্তফা কামালের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সাজেদুলসহ অন্যরা সুইচ গিয়ার চাকু, রাম দাসহ বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ওৎ পেতে থাকেন। মোস্তফা কামাল ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই সুযোগ বুঝে সাজেদুল হাতে থাকা বিদেশি পিস্তল দিয়ে মোস্তফা কামালকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি করেন। যার মধ্যে দুই রাউন্ড গুলি কামালের বুকে ও পিঠে লাগে এবং এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
র্যাব জানায়, সাজেদুলসহ অন্য সহযোগীরা গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকা, পতেঙ্গা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যান এবং আত্মগোপন করেন। এই অবস্থায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সাজেদুল, পাভেল ও মামুন র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। সাজেদুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রহমত উল্লাহকে নড়াইল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরাফাত ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাজিদ মল্লিক জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। ওই সময় তার হাতে থাকা চার রাউন্ড এমুনিশন ভর্তি অস্ত্র দিয়ে তিন রাউন্ড গুলি করেন। এতে চেয়ারম্যানের হাতে, বুকে ও পাঁজরে গুলি লাগে। পরবর্তী সময়ে এই অস্ত্রটি তিনি নড়াইলের মধুমতি নদীতে ফেলে দেন। এরপর আত্মগোপনে চলে যান। অন্যদের হাতেও অস্ত্র ছিল। তাদের এক লাখ টাকায় ভাড়া করে আনা হয়েছিল এই হত্যাকাণ্ডের জন্য।
জড়িত সাবেক ইউপি সদস্য কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী কি না বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয়টা এখানে মুখ্য নয়, অপরাধটা মুখ্য। রাজনৈতিক অনুসরণের সঙ্গে অপরাধের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের কাছে অপরাধটাই মুখ্য এবং অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’