স্ত্রী সন্তানসহ বেনজীরকে দুদকে তলব
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদকে স্ত্রী-সন্তানসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ৬ জুন তাঁকে এবং ৯ জুন স্ত্রী ও সন্তানকে স্বশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে তলব করা হয় বলে জানা গেছে।
এর আগে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের ৮৩টি জমির দলিল ও ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ আদেশ আমলে নিয়ে শিগগিরই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করবে। দুদক সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মে) আদালতের এ আদেশের পর পুলিশ ও র্যাবের এই সাবেক কর্মকর্তা এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের অবৈধ পন্থায় অর্জিত বিপুল সম্পদ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
দুদকের প্রধান আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুদকের আবেদনে আদালত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন।’
আজ শুক্রবার (২৪ মে) সকালে টেলিফোনে দুদকের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘দুদক আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী আমাদের অনুসন্ধানকারী দল এখন বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করতে পারবে।’
অনুসন্ধানকারী দল তাদের প্রয়োজনে যেকোনো সময় বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের তলব করতে পারে জানিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুদক আইন ও বিধিমালা এবং মানিলন্ডারিং আইন ২০১২ এর ক্ষমতাবলে আদালত বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং তাদের নামে থাকা জমির দলিল জব্দ করেছেন। এখন তারা এগুলো ট্রান্সফার (হস্তান্তর) করতে পারবেন না। এগুলো সবই করা হয়েছে অনুসন্ধান কাজের অংশ হিসেবে। এখন পরবর্তী অনুসন্ধানের প্রয়োজনেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে।’
গত ৩১ মার্চ একটি পত্রিকায় বেনজীরের ঘরে ‘আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যেখানে তার অর্থ-সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। এ ছাড়া তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানে রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠা জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুলিশের বহুল বিতর্কিত কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
একজন নাগরিক হিসেবে এ আবেদন করেছেন জানিয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘সবাইকে আল্লাহ বাঁচাইছে, বেনজীর সাহেব বেশিদিন সময় পাননি। আর কিছুদিন সময় পেলে গোপালগঞ্জ কিনে নিতেন। পুলিশে যারা অসৎ হবেন, বেনজীর সাহেবকে আদর্শ ধরে নেবেন।’