বিদেশে বেনজীর পরিবারের সম্পদের খোঁজে দুদক
দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেনজীরের কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তা জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে ওই সব দেশে তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।
আজ বুধবার (২৯ মে) দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, অনুসন্ধান শুরুর এক মাসের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় বেনজীর পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়ার পর তিনি বিদেশেও অর্থ পাচার করেছেন বলে সন্দেহ করছে দুদক।
এদিকে, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করবে দুদক। চলতি সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত আবেদন আদালতে দাখিল করবেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। এ কারণে দুবাই, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে তার কোনো সম্পদ থাকলে সেসবের নথিপত্র চেয়ে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বিএফআইইউকে চিঠি দিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান টিম।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক বলেন, ‘তাকে (বেনজীর আহমেদ) বলতে হবে, এই সম্পত্তি কোত্থেকে এল, কীভাবে এল। দুদক সব সময় বৈধ সম্পত্তি দেখবে, সম্পত্তির উৎস দেখবে। তার সম্পত্তি যদি অবৈধ হয়, তাহলে সেগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। সে জন্য সম্পদ ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করা হচ্ছে। ফ্রিজ না করলে সম্পদ হস্তান্তর হয়ে যেতে পারে।’
গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে তলবি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল পাঠানো নোটিশে বেনজীর আহমেদকে আগামী ৬ জুন এবং তার পরিবারের সদস্যদের ৯ জুন ডেকেছে দুদক। তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও তিন মেয়েকেও তলব করা হয়।
বেনজীর আহমেদের পরিবারের নামে থাকা ১৯৬টি দলিলে ৬২৭ বিঘা জমি (২০ হাজার ৭০৩ শতক) এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে। এসব সম্পদের মধ্যে মাত্র ২৮ বিঘা নিজের নামে রেখে বাকি সম্পদ স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে করেছেন বেনজীর। স্ত্রী জীশান মীর্জার নামেই কিনেছেন ৫৪৩ বিঘা জমি। নিজের জেলা গোপালগঞ্জের তিন উপজেলা ছাড়াও মাদারীপুরের রাজৈরে এসব জমি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটন জেলা কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন ও উখিয়ার ইনানী সমুদ্র সৈকতে বেনজীর আহমেদ নিজে, স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে জমি কিনেছেন।
এ ছাড়া বেনজীর পরিবারের কেনা রাজধানীর গুলশানে ৯ হাজার ১৯৩ বর্গফুটের চারটি ফ্ল্যাটও জব্দ করা হয়েছে। এই পরিবারের নামে থাকা ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ২৫টি কোম্পানিতে শতভাগ ও আংশিক বিনিয়োগ করা অর্থ অবরুদ্ধ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে এসব সম্পদ কিনেছেন বেনজীর আহমেদ। তিনি ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগে ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে শুধু মাদারীপুরের রাজৈরে জীশান মীর্জার নামে প্রায় ২৭৩ বিঘা জমি কেনেন। এ ছাড়া অবসর নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ২০২৩ সালের ৫ মার্চ একদিনেই গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এগুলোর মধ্যে স্ত্রীর নামে তিনটি ও তার নাবালিকা এক মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব এবং র্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।