চামড়ার দরপতনের কারণ!
ঈদুল আজহা উপলক্ষে চামড়ার মূল্য নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। গরুর চামড়া বিভিন্ন দামে বিক্রি হলেও কাঙ্খিত দাম মিলছে না ছাগলের চামড়ার। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। কোথাও কোথাও গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। তবে, ব্যতিক্রম ছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ কাঁচা চামড়ার মোকাম নাটোরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার আড়তগুলো। অকার ও মানভেদে এখানে প্রতি পিচ গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়। ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। চামড়ার এই দরপতনের জন্য ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে তা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন।
নাটোর মার্কেটের প্রবীন চামড়া ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন টগর জানান, দেশের বার্ষিক মোট চামড়ার অর্ধেক আসে কোরবানি ঈদে। অথচ, কোরবানি ঈদে যে চামড়া মার্কেটে আসে তার সিংহভাগ ত্রুটিপূর্ণ। পেশাদার কসাইয়ের সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য এবং তাদের খরচ অনেক বেশি হওয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর কাজ করেন বাড়ির লোকজনসহ অপেশাদার ব্যক্তিরা। এ কারণে চামড়াগুলো কাটা ছেঁড়া হয়ে থাকে। যত বড় চামড়াই হোক, এর বাজার মূল্য থাকে না।
টগর আরও বলেন, এ কারণে অনেকে বাজারে এনে দাম না পাওয়ার অভিযোগ করেন। একই অবস্থা ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রেও। যেনতেনভাবে চামড়া ছাড়ানোর কারণে ছাগলের চামড়ার নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া মাদ্রাসাগুলো সারাদিন চামড়া সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় মার্কেটে নিয়ে আসে। এতে করে চামড়ায় পচনযুক্ত আদ্রতা তৈরি হয়। এই চামড়া কিনে কোনো ব্যবসায়ীই লোকসান দিতে রাজি হবে না। ফলে মূল্য না পেয়ে সেসব চামড়া ফেলে দিতে হয়।
নাটোর মোকামের আড়তদার রকিব উদ্দিন জানান, সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণে সমস্যা তৈরি হয়। কোনো ব্যবসায়ীই লোকসানের শঙ্কা মাথায় নিয়ে মানহীন চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে কিনবে না। রকিব উদ্দিন জানান, যেসব মৌসুমী ব্যবসায়ী চামড়ার মান সম্পর্কে না যেনে আকার দেখে চামড়া কেনে, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। তাহলে, বেহিসাবি দামে চামড়া কিনে তাদেরও ধরা খাওয়ার ভয় থাকবে না। মার্কেটে এনে আড়তে আড়তে ঘুরতে হবে না।
প্রায় ৫০ বছর ধরে চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নাটোর মোকামের ব্যবসায়ী বাদল সরকার জানান, গুণগত মানের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ফিনিসড চামড়া তৈরি হয় বাংলাদেশে। অথচ, প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে আমাদের চামড়ার দাম কম। এটা হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চামড়া শিল্প কয়েকজন রাসায়নিক দ্রব্য আমদানিকারকের হাতে বন্দি। চামড়া প্রক্রিয়াজাত ও প্রস্তত করার জন্য যেসব রাসায়নিক দ্রব্য দরকার, তা আমাদানি করে গুটি কয়েক ব্যবসায়ী। তারা সিন্ডিকেট করে রাসায়নিক দ্রব্যের দাম এতো পরিমাণ বাড়িয়েছে যে উৎপাদন খরচ সমন্বয় করতে কম দামে চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিক ও ব্যবসায়ীরা বাধ্য হচ্ছে।
ঈদের দিন থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত নাটোরের চকবৈদ্যনাথ চামড়া মোকামে নাটোর জেলার প্রায় দুই লাখ চামড়াসহ আশপাশের উপজেলা মিলে প্রায় তিন লাখ চামড়া কেনাবেচা ও লবণজাত হয়েছে। আগামী সপ্তাহে থেকে দেশের আরও ২১ জেলা থেকে লবণজাত চামড়া আসবে নাটোর নাটোর মোকামে। সে সময় ট্যানারি মালিক ও তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে চলবে চামড়া কেনাবেচা।
নাটোর মোকামে এ বছর কোরবানি উপলক্ষে সাড়ে ১২ লাখ চামড়া কেনাবেচা হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায় আকরামুল ইসলাম।