কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়কের বেহাল দশা
পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর ইউনিয়নের শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সড়কটির সাড়ে ১১ কিলোমিটার বেহাল দশা। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত পরিণত হয়েছে। সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক আর ভয়।
এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা হাজারো পর্যটকসহ এলাকার মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর মৎস্য বন্দর পর্যন্ত সড়কটির সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশে বড় বড় গর্ত হয়েছে। গাড়ি চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তা ছাড়া পর্যটনমুখী সড়ক হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলায় এবং বর্ষায় সড়কটিতে শত শত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কের অর্ধেক অংশের পিচ, বালু-খোয়া পর্যন্ত উঠে গিয়ে সড়ক সংকোচিত হয়ে গেছে। এর ফলে ভাঙা সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
পাখিমারা বাজারের ব্যবসায়ী মো. সোহেল গাজী (৩৮) বলেন, এটা মনে হয় না মহাসড়ক। এটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। তিনি থেকে চার ফুট গর্তও হয়েছে। গাড়ি যেকোনো মুহূর্তে পড়ে গেলে বড় ধরনের বিপদ ঘটবে। এটি এখনই সংস্কার করা না হলে যাতায়াত করা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে।
হানিফ পরিবহণের চালক মো. মঞ্জু হাওলাদার বলেন, ‘গাড়ি অনেক রিস্ক নিয়ে চালাই। যেকোনো মূহূর্তে দূর্ঘটনার শিকার হতে পারি।’
কুয়াকাটা ভ্রমণে মানুষের অনীহার বড় একটি কারণ হলো কুয়াকাটামুখী সড়কটির চরম দুরবস্থা। সড়কটির বেহাল দশার জন্য অনেকে কুয়াকাটায় আসতে চায় না। বছরের পর বছর ধরে সড়কটি ভেঙে পড়ে আছে। অথচ এর সংস্কার বা মেরামতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। কুয়াকাটার স্বার্থে এ সড়কটি মেরামত করা জরুরি। সড়কসহ কুয়াকাটার যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা দুর করা গেলে কুয়াকাটার প্রতি মানুষের আগ্রহ যেমন বাড়বে, তেমনি কুয়াকাটার ব্যবসা-বাণিজ্যও আরও সম্প্রসারিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ অর্থবছরে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর মৎস্য বন্দরের শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে খুলনার দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ২০ কোটি টাকা। কাজটি মানসম্মত না হওয়ায় তখন ঠিকাদারের বিল আটকে দেয় পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুটি দল সরেজমিন তদন্তও করে। তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকেও কাজের গুণগত মান ভালো হয়নি বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে তখন সওজ আট কোটি টাকার বিল আটকে দেয়। তবে এ কাজ বাবদ ১২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম চূড়ান্ত বিল দাবি করে ২০১৪ সালে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলার কারণে ১১ কিলোমিটার সড়কের ওপর সংস্কার কাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। যার ফলে ১০ বছর ধরে সংস্কার বিহীন অবস্থায় পড়ে আছে পাখিমারা বাজার থেকে শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত এ অংশের সড়কটি। তবে কুয়কাটা পর্যটন এলাকায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ায় সওজ কর্তৃপক্ষ এ অংশে জরুরি মেরামত কাজ করে সচল রাখে সড়কটি।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ বলেন, ‘কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়কের সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়কটি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় এত দিন এর সংস্কারকাজ করা যায়নি। গত বছরের ২৭ মার্চ উচ্চ আদালত এ সড়কের মামলার শুনানি শেষে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় এ সড়কের নির্মাণ বা মেরামতের জন্য আর কোনো বাধা নেই। ইতোমধ্যে সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ১৭ কোটি টাকার প্রাক্কলন তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী মাসের মধ্যে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতে পারব। এরপর দ্রুত সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু করতে পারব।’