গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া-২ কেন্দ্রের টিটি স্কুলের ৪০৭ নং কক্ষ। এইচএসসি পরীক্ষার ওই কক্ষে গত ২ জুলাই কক্ষপ্রধান ছিলেন সহকারী অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন মোল্লা। নিয়মে না থাকায় পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাঁচটি মুঠোফোন জব্দ করেন তিনি। সেগুলো সব আবার স্মার্ট ফোন। ঘটনার পরদিনই তার হাতে পৌঁছে অব্যহতিপত্র। এরপর আশরাফ উদ্দিন মোল্লা অভিযোগ করেন, মুঠোফোন উদ্ধারের কারণে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যদিও কেন্দ্র সুপারের দাবি, ওই মুঠোফোন দিয়ে নকল না করায় মৌখিক সতর্ক করে শিক্ষার্থীদের হাতে তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর কক্ষে ডিউটিরত শিক্ষক আশরাফ উদ্দিন মোল্লা নিয়ম লঙ্ঘন করে কক্ষের ভিতর মোবাইল নিয়ে গিয়েছিলেন বলে এ ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নেব।

এদিকে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনূর আক্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নেছারউদ্দিন তালুকদার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন মোল্লা। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) অভিযোগে তিনি জানান, গত ২ জুলাই কোটালীপাড়া-২ কেন্দ্রের টিটি স্কুল ভেন্যুর ৪০৭ নং কক্ষে কক্ষপ্রধান হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম। ওই কক্ষের পাঁচ পরীক্ষার্থী  অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনসেটের মাধ্যমে পরীক্ষায় নকল করছিল। আমি তাতে বাধা দিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসেট জব্দ করি। সেটগুলো ভেন্যুর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার রায়ের কাছে জমা দিই। পরে আমি বিষয়টি হল সুপার ললিত কুমার বৈদ্য, সংযুক্ত কর্মকর্তা ও কোটালীপাড়া উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মোল্লাকে জানাই। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে মোবাইল ফোনসেট ফেরত দেওয়া হয়। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কেন্দ্র সুপারের প্ররোচণায় আমাকে ৪ জুনের পরীক্ষার ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেন। আমি যাতে নকল বন্ধ করতে না পারি এজন্য আমাকে কেন্দ্রের ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কাছে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বলে আমাকে জানান।

কোটালীপাড়া কাজী মন্টু কলেজ কেন্দ্রের সুপার ললিত চন্দ্র বৈদ্ধ বলেন, ‘গত ২ জুলাই বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষার সময় ছাত্ররা মোবাইল নিয়ে এসেছিল। কিন্তু মোবাইল দিয়ে কোনো নকল করা হয়নি। পরীক্ষা শেষে মোবাইল নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। ওই কক্ষে ডিউটিরত শিক্ষক আশরাফ উদ্দিন মোল্লা নিজেও নিয়ম লঙ্ঘন করে কক্ষের ভেতর মোবাইল নিয়ে গিয়েছিলেন।  কক্ষের ভেতর তার মোবাইল নেওয়ার অধিকার নেই। কিন্তু তিনি মোবাইল নিয়ে যে অন্যায় করেছেন এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেব।’

কেন্দ্রের সুপার মুঠোফোন জব্দের বিষয়টি স্বীকার করলেও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মোল্লা বলেন, ‘ওই শিক্ষক কোনো মোবাইল ফোন জব্দ করেননি। কিংবা ওই মোবাইল কারও কাছে জমাও দেননি। তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই শিক্ষক নিয়ম ভেঙে হলের মধ্যে নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন। তিনি প্রতি বছর পরীক্ষার ডিউটিতে এসে বিভিন্ন রকম ঝামেলা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই তার ডিউটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র।’

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনূর আক্তার বলেন, ‘আমরা ওই শিক্ষকের অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’