পিজিআরকে অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের নির্দেশ রাষ্ট্রপতির
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) সদস্যদেরকে কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠায় অটল এবং ‘চেইন অব কমান্ডে’র প্রতি আস্থাশীল থেকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন ‘চেইন অব কমান্ডের প্রতি আস্থাশীল থেকে আপনাদের ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন।’
আজ শনিবার (৬ জুলাই) বিশেষায়িত এই বাহিনীর ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের পিজিআর সদর দপ্তরের শহীদ ক্যাপ্টেন হাফিজ হলে পিজিআরের দরবারে প্রধান অতিথির ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মনে রাখবেন, দেশ ও জাতি যে মহান দায়িত্ব আপনাদের ওপর অর্পণ করেছে, সেই দায়িত্ব পালনে যেকোনো আত্মত্যাগ জাতির ইতিহাসে আপনাদেরকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।’
রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, ‘সমসাময়িক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিস্তৃত বহুমাত্রিক নিরাপত্তা, নতুন নতুন তথ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণে প্রয়োজন অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ।’ পিজিআর সদস্যদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, আত্মোন্নয়নে মনোযোগী হতে এবং সর্বোপরি সৈনিক হিসেবে নিজের শারীরিক যোগ্যতাকে সর্বদা অক্ষুণ্ন রাখতেও উপদেশ দেন তিনি।
পেশাগত মান ও দক্ষতাকে আরও বিকশিত ও বিশ্বমানে পৌঁছাতে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে প্রয়োজনে আরও জোরদার করার পরামর্শও দেন রাষ্ট্রপ্রধান।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘একটি পেশাদার সেনাবাহিনীর অংশ হিসাবে সমসাময়িক বাস্তবতার পাশাপাশি অতীত ইতিহাস ও ঘটনাপ্রবাহ থেকেও পিজিআরকে আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন।’
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এই দিনটি প্রতিটি গার্ডস সদস্যের কাছে একটি বিশেষ দিন উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া পিজিআরের সদস্য হিসেবে তারা দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করছেন। নিঃসন্দেহে এটি খুবই আনন্দ ও গৌরবের একটি বিষয়।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর কালরাতে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও এটি সত্যি, পিজিআর প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪২ দিনের মাথায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা বিপদগামী একদল সেনা কর্মকর্তার নির্মম বুলেটের আঘাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে শহিদ হন। সেদিন আমরা আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাকে রক্ষা করতে পারিনি, সেটা ছিল আমাদের অমার্জনীয় অপরাধ।’
‘সেদিন যদি পিজিআর আজকের মতো সুসংগঠিত ও চৌকস হতো তাহলে হয়তো ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করতে পারত না ঘাতক দল। বাঙালি ও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ইতিহাস অন্য রকম হতে পারত। দেশ পরিণত হতো জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায়’, যোগ করেন মো. সাহাবুদ্দিন।
রাষ্ট্রপতি পিজিআর সদস্যদের বলেন, তাদের (পিজিআর) ওপর অর্পিত দায়িত্ব একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে তেমন গৌরবময়। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও অনেক দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারা দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছেন।
রাষ্ট্রপতি একটি সুশৃঙ্খল, পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টকে বর্তমান অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করার কারিগর হিসেবে সাবেক সদস্যদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, পিজিআরের সার্বিক উন্নয়নকে সরকার অগ্রাধিকার দেয়। ভবিষ্যতেও এই রেজিমেন্টকে আরও সুসংহত ও আধুনিক করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে তিনটি নতুন ডিভিশনসহ বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন এবং ছোট বড় ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
‘ঐতিহ্যবাহী ও বিশেষ রেজিমেন্টে পিজিআর জাতির গর্বের সেনাবাহিনীরই আরেকটি বিশেষায়িত অংশ’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বর্তমানে সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাকাল হতে অদ্যাবধি প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যরা কর্তব্য পালনে আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দায়িত্ববোধ, পেশাগত উৎকর্ষ, দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে পিজিআর এর সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে দিতে হবে।’
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ কামাল ঢাকা সেনানিবাসের পিজিআর সদর দপ্তরের শহীদ ক্যাপ্টেন হাফিজ হলে পিজিআরের দরবারে রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানান।
রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিব, ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের কমান্ডাররা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন করেন এবং দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি কেক কাটেন।