হাজারো শিক্ষার্থীর স্লোগানে উত্তাল নওগাঁ, পুলিশের গুলিবর্ষণ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও নয় দফা দাবিতে নওগাঁয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টায় শহরের কাজীর মোড়ে সমবেত হয়ে এ কর্মসূচি শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিলটি কাজীর মোড় হয়ে শহরের ব্যস্ততম সড়ক মুক্তির মোড়ের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মুক্তির মোড় পেরিয়ে নওজোয়ান মাঠের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রথম দফায় সড়ক অবরোধ করে। এসময় সড়কে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সাথে তাদের সমস্বরে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে স্লোগান দিতেও দেখা যায়।
এভাবে প্রায় ২০ মিনিট সড়ক অবরোধ করার পর মিছিলটি আবারও কাজীর মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়। কাজীর মোড়ে মিছিলটি পৌঁছানোর পর তাদের সাথে যুক্ত হয় উকিল পাড়া এবং ডিগ্রির মোড় হয়ে আসা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বড় দুইটি অংশ। এরপর সকলে একত্রিত হয়ে কাজীর মোড় সড়কে বসে দ্বিতীয় দফায় আরও ১৫ মিনিট অবরোধ করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শহরের মুক্তির মোড় হয়ে বাটার মোড়ের দিকে রওয়ানা হলে শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। তবে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সামনে এগোতে থাকে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিছিলটি সরিষাহাটির মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে ভেতর থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এসময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করে জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়।
এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও পাঁচ রাউন্ড র্যাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এরমধ্যেই এ সংঘর্ষের ঘটনায় ইটের আঘাতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গাজিউর রহমান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজের কন্ট্রিবিউটিং প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম শামীমসহ অন্তত ১৮ জন আহত হয়।
সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা আবারও জমায়েত হয়ে মুক্তির মোড়ে অবস্থান নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় শিক্ষার্থীরা রাস্তার ওপর বসে পড়ে প্রায় এক ঘন্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখে। দুপুর দেড়টার দিকে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়।
২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আবু আনছার আলী বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৮ জন রোগী হাসপাতালে এসেছেন। এদের মধ্যে দুইজন র্যাবার বুলেটে আঘাতপ্রাপ্ত ছিলেন। বাকীদের বেশিরভাগই মাথায় ইটের আঘাত লেগে আহত হয়েছেন। রাবার বুলেটে আহত একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। দুইজনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গাজিউর রহমান বলেন,‘মিছিলের শুরু থেকেই পুলিশ সহনশীল আচরণ করেছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। তবে মিছিলটি আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের কাছে পৌঁছালে মিছিল থেকে কিছু দুষ্কৃতিকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এরপরই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইটের আঘাতে আমি নিজেও হাতে গুরুত্বর আঘাত পেয়েছি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাঁ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’