ন্যায়বিচারের জন্য মানুষ আজ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে : অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, প্রধান বিচারপতি দ্বিতীয় মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আপনি। আপনাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতিই শুধু পছন্দ করে নিয়োগ প্রদান করেননি, আপনার নিয়োগের পিছনে রয়েছে এদেশের শত শত নিরীহ ছাত্রের বুকের তাজা রক্তে ভেজা রাজপথের কালজয়ী অমর কাব্যের এক বীরত্বগাঁথা উপাখ্যান। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। দেশের মানুষ আজ ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষায় আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।
আজ সোমবার (১২ আগস্ট) আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাস কক্ষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে দেওয়া সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাস কক্ষে এ সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দ্বিতীয় মুক্তি সংগ্রামের মধ্যদিয়ে অর্জিত এক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আপনি। আপনাকে রাষ্ট্রপতিই শুধু পছন্দ করে নিয়োগ দেননি, আপনার নিয়োগের পিছনে রয়েছে এদেশের শত শত নিরীহ ছাত্রের বুকের তাজা রক্তে ভেজা রাজপথের কালজয়ী অমর কাব্যের এক বীরত্ব গাঁথা উপাখ্যান। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। বিপ্লবোত্তর যেকোনো দেশে রাজপথ কিংবা রণাঙ্গন ঠিক করে দেন সেই দেশের নেতা কে হবেন। আর আমাদের দেশের বীর ছাত্ররা, তাদের পাশে থাকা অভিভাবকেরা, তাদের শুভাকাঙ্খীরা রাজপথ থেকে আপনাকে প্রধান বিচারপতি করার দাবি তুলেছিলেন। এ ভালোবাসা বিরল, এ ভালোবাসা অমূল্য, এ ভালোবাসা নিয়ে গর্ব করতেই পারি, তাই না?
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো গুম হওয়া মানুষের আত্মা, অসংখ্য মানুষের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার বেদনা, অগণিত মানুষের নির্যাতন-নীপিড়নের গল্প, অনেক মৃত মানুষের গায়েবি মামলায় আসামি হওয়ার অভিশাপ, অনেক পরিবারের নিঃস্ব হওয়ার হাহাকার থেকে উৎসারিত প্রতিবাদের ভাষা থেকে প্রতিরোধে রূপ নেওয়ার অন্য অবয়ব আজকের বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশে খুন-গুম-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার সেইসব আত্মা, সেইসব মানুষ আজ ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষায় আছে, আপনার দিকে তাকিয়ে আছে, গোটা দেশবাসীর মতো আমিও আশা করি আপনি তাদের বিমুখ করবেন না।
এই দেশকে, এই দেশের সংবিধানকে, এদেশের মানুষের অধিকার রক্ষার্থে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে আপনার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবকত্ব প্রকাশ পাক এটা আবু সাঈদ-মুগ্ধ-ফারাজ সহ শত শহীদের প্রত্যাশা ছিল, তাদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত কারণ ছিল। আশা করি আপনার নেতৃত্বে সবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, গোটা জাতি প্রত্যাশা করে, বিচার বিভাগ সিন্ডিকেট মুক্ত হোক। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ভিতর শুদ্ধি অভিযান করে সকল ধরনের দুর্নীতি নির্মূল করার প্রত্যাশা রাখছি। অনেক আইনজীবীর মতো আমিও প্রত্যাশা করি আমাদের সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ সম্পর্কে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া, সমতল থেকে পাহাড়-সমুদ্র পর্যন্ত এই ধারণা না পৌঁছাক যে, কোন আদালতে গেলে কোন আইনজীবী সুবিধা পাবে।
গত দেড় দশকের কথা উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কারাগার, ব্যবসা পাড়া, এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতেও একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, সরকারি দলের সংশ্লিষ্টতা থাকলে বিচাররকদের নিকট থেকে আনুকূল্য পাওয়া যায়। এটা আর ধারণার পর্যায়ে নেই, এটি আজ বিচার বিভাগ ধ্বংসের এক নির্মম বাস্তবতা। দূর্নীতির প্রচলিত ধারণায় অর্থনৈতিক লেনদেনকে বুঝালেও, বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি ডিনামাইটের চেয়েও ধ্বংসাত্মক, এটম বোমার চেয়েও ভয়াবহ, ক্যানসারের চেয়েও মরণঘাতি। আপনার পূর্বসূরীদের সেই মরণঘাতী দুর্নীতির কারণে দেশ আজ গণতন্ত্রহীন, মানুষ অধিকারহীন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরুদ্ধ। ওইসব মরণঘাতি বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতির কারণে এই অঙ্গনে মেধাবী আইনজীবীরা অনেকেই শুরুতেই ঝরে যায়, ফুটে উঠে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কিছু বিবেকহীন আইনজীবী, যার ফলে ভালো আইনজীবী তৈরী হতে অসুবিধা হচ্ছে।
প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশে করে মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনের জন্য আপনি প্রমিথিউস হোন, আপনার কর্মফলে নতুন বাংলাদেশ অঙ্কিত হোক-ভ্যানগগ কিংবা পিকাসোর রং তুলিতে নয়, সৈয়দ রেফাত আহমেদ এর টিমের মেধা, প্রজ্ঞা, সততা আর হৃদয় উৎসারিত ভালোবাসার নৈবেদ্য নিবেদনের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। তারপর আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এরপর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।