ভারতে বসে শেখ হাসিনা চক্রান্ত করছে : মির্জা ফখরুল
ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করেছি। তারপরে যদি মনে করেন, আমাদের লড়াই শেষ হয়ে গেছে, তাহলে ভুল করবেন। এখন অত্যন্ত একটা ভাসমান অবস্থায় আছে। ভারতে বসে আছেন শেখ হাসিনা, যেকোনো মুহূর্তে তিনি তার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। ইতোমধ্যে চক্রান্ত শুরু করেছে, সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করাই আমাদের কাজ।’
আজ শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে এক দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির উদ্যোগে এই মিলাদ মাহফিলে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও আশু সুস্থতা কামনা এবং চলমান আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়াও অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করে মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক। ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে আজকে মহানগর-জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এ দোয়া মাহফিল করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে আসুন আমরা সবাই সেই প্রতিজ্ঞাই আল্লাহ‘তালার কাছে করি, তিনি যেন আমাদের বিএনপির যে ভাবমূর্তি, যেটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তৈরি করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তৈরি করেছেন, তারেক রহমান সাহেব তৈরি করেছেনন সেই ভাবমূর্তিকে সবাই অক্ষুণ্ন রেখে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।’
বিএনপিনেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিএনপি ১৭ বছর ধরে লড়াই করে তার একটা ভিত্তি তৈরি করেছি, সেই ভিত্তির ওপরে দাঁড়িয়ে আমাদের ছেলেরা তরুণ-যুবক-ছাত্ররা আন্দোলন বিজয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে। আবু সাঈদ থেকে শুরু করে আরও অনেকে, প্রায় হাজার খানেক শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছে। ৩ থেকে ৫ আগস্ট আমাদের ছাত্রদলের বহু ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম, তখন ১২৪ জন ছিল। আমি খবর নিয়ে দেখলাম, সেখানে ৯০ জন হচ্ছে ছাত্রদলের ছেলে। কিন্তু কখনো সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। সবাইকে এক হয়ে এখন কাজ করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে কমিউনালিজমের কথা বলছে, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার—এসব কথা বলছে, এটা একটা চক্রান্ত। এই কথা বলে ধোঁয়া তুলে তারা (আওয়ামী লীগ) আরেকটা ঝগড়া করতে চায়। আপনাদের দায়িত্ব প্রত্যেক এলাকায় নিজেরা মিলে শান্তি বিগ্রেড তৈরি করেন, শান্তি বিগ্রেড তৈরি করে পাহারা দেবেন। সমস্ত সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়, মন্দির, গীর্জা এসব পাহারা দেবেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, তাদের জীবন-মালের দায়িত্ব আপনাদের। আমার একজন শিক্ষক ছিলেন, ইমানদার আলেম ছিলেন মাওলানা তমিজ উদ্দিন সাহেব। তিনি বাবরি মসজিদে হামলার সময় সবাইকে বলেছিলেন, যে দেশে সংখ্যালঘুরা আছে সেখানে সংখ্যাগরুদের, অর্থাৎ আমাদের তারা আমানত, পবিত্র আমানত। এই আমানত যে খেয়ানত করে সে আর মোমেন থাকে না। একথাগুলো মাথার ভেতরে সবাইকে আনতে হবে এবং তাদের প্রটেকশনের (সুরক্ষা) ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।’
একইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে দেশকে সামনের দিতে এগিযে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে বলেও নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান দলটির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে পত্র-পত্রিকায় যে বিরূপ খবর দেখি, তখন আমরা আতঙ্কিত হই। আবার কোন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে? জনগণের ভোটকে, জনগণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার জন্য আবার কোন নব্য ফ্যাসিবাদ এসে উপস্থিত হচ্ছে কিনা! এদিক থেকে সজাগ থাকতে হবে। অর্থাৎ ঐক্য, ঐক্য, ঐক্যে এবং ধৈর্যশীল অবস্থা, সহনশীল অবস্থা, ডিসিপ্লিনের মধ্যে আমাদেরকে চলতে হবে। এই কথা বলছি এজন্য যে, আজকে ম্যাডামের জন্মদিনের অনুষ্ঠান না? কয়জন এসেছেন? কালকে আপনাদের প্রোগ্রাম ছিল না? কয়জন এসেছিলেন। সেভাবে আসে নাই। অনেক কম, আজকেও কম। কী জন্য? জয় হয়ে গেছে?’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘না, এই যুদ্ধকে জারি রাখতে হবে, এই সংগ্রামকে চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে আমরা অনেক বিপদে পড়ে যাব। এক ফ্যাসিবাদকে পরাজতি করেছি আমরা। নব্য ফ্যাসিবাদ যেন না আসতে পারে তার জন্যে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সরকার একেবারে নরম সরকার, অন্তর্বতীকালীন সরকার….এটা মনে রাখতে হবে। তার দায়িত্ব একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে। জঞ্জাল জমা হয়েছে তো, এই জঞ্জাল তো সাফ করতে হবে। এজন্য তাদেরকে কিছু সময় তো দিতে হবে। সেইভাবে কাজ করে আমাদের সংগ্রামকে জারি রাখতে হবে। ম্যাডামের যে আদর্শ তাকে অনুসরণ করতে হবে, ম্যাডামের যে বক্তব্য তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো প্রতিহিংসা নয়, কোনো প্রতিশোধ নয়।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় এই দোয়া মাহফিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, শাম্মী আখতার, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, যু্ব দলের মোনায়েম সুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, উলামা দলের মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজা, মাওলানা কাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।