চাঁদপুরে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দাম
নিষেধাজ্ঞার আগে চাঁদপুরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। মৌসুমের শেষ সময়ে জেলেরা দিনরাত নদীতে জাল ফেলছে। ফলে জেলেপাড়ায় বেড়েছে ব্যস্ততা। চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। তবে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দাম।
পদ্মা-মেঘনা থেকে ধরে আনা ইলিশ বিক্রি করতে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে মৎস্য আড়তে ভিড়ছে জেলে নৌকা। সেখান থেকে ঝুড়িতে করে আড়তে এনে স্তূপ করছে শ্রমিকরা। এতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের হাঁকডাকে পুরোদমে সরগরম মাছঘাট। পাইকারদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতারাও এখন ভিড় করছেন এই আড়তে।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত থাকে এ ইলিশের ঘাট। মা ইলিশের ডিম ছাড়া উপলক্ষে আগামী অক্টোবর মাসে শুরু হচ্ছে ২২ দিনের মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা।
পদ্মা-মেঘনার জেলে আলমগীর সৈয়াল, সোলেমান মোতাহের ও মুসা পাটোয়ারী বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম যাচ্ছে। এই এক মাস নদীতে ইলিশ পাওয়া যাবে কিন্তু অক্টোবর মাসে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আসবে। তখন আর ইলিশসহ অন্য মাছ ধরা যাবে না। আমরা এত দিন ধারদেনা করে চলেছি। এখন দিনরাত মাছ ধরে ক্ষতি পোষাতে হবে।
জেলেরা জানান, আগের মতো আর নদীতে ইলিশ পাওয়া যায় না। এখন সারা দিনে অল্প ইলিশ পাওয়া যায়। তবে দাম বেশি পাওয়ায় পোষিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। নদীর স্রোত ও বৃষ্টি হলে ইলিশ পাওয়া যায়। এখন নদীন পানি কমছে আর বৃষ্টিও হচ্ছে না, যার কারণে জালে কম ইলিশ ধরা পড়ে।
ইলিশ ব্যবসায়ী ফয়েজ ঢালী ও নবীর হোসেন বলেন, আগের তুলনায় ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে কিন্তু দাম কমেনি। মাছঘাটে কয়েক দিন ধরে অনেক ক্রেতা আসছে। তাই দাম নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। মাছের তুলনায় ক্রেতা বেশি, যার কারণে দামও বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি ইলিশ এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজি ওজনের কম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। তবে প্রতিদিন সরবরাহের ওপর ইলিশের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে।
চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘আমার স্বজনদের জন্য ঢাকায় পাঠাতে ৭৮ কেজি ইলিশ কিনেছি। প্রতি কেজি ইলিশ এখনও এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা। আরও বেশি ইলিশ কেনার ইচ্ছা থাকলেও বেশি দামের কারণে কিনতে পারিনি। এখানে আসি ইলিশ কমে কিনার জন্য কিন্তু অদ্ভুত বিষয় এখানেই ব্যবসায়ীরা দাম বেশি রাখে। পুরো মাছঘাটে একই দাম। তার মানে এখানে দাম নিয়ন্ত্রণ হয় আগে থেকেই।
নরসিংদী থেকে ইলিশ কিনতে আসা এস এম শাহীন বলেন, ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুর মাছঘাটে এসেছি কম দামে ইলিশ কিনতে। কিন্তু এখানে এসে দেখি ভিন্ন চিত্র।
ইলিশের দাম অনেক বেশি। এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৭০০ টাকা চায়। কী কারণে ইলিশের দাম এত বেশি বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে এখানে সিন্ডিকেট কাজ করছে। মানুষ অসহায় তাদের কাছে। এত দাম দিয়ে ইলিশ কিনে খাওয়ার সক্ষমতা সবার নেই।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, চাঁদপুর মাছঘাটে প্রতি দিন ৫০০ থেকে ৭০০ মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে এক হাজার মণ ইলিশও আসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইলিশ কিনতে আসছেন ক্রেতারা। তবে আগের তুলনায় ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দাম। আশা করছি ইলিশ সরবরাহ আরও বাড়বে। তখন দাম কমে আসবে।